* বাঁধের কাজে দলীয়করণ, গণশুনানী ছাড়াই পিআইসি গঠনের অভিযোগ
* দুর্মুজ ও ঘাস লাগানোর কাজ বাকি
* বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা পিআইসি সংশ্লিষ্টদের
* ইউএনও’র দাবি ৯৯ ভাগ, হাওর বাঁচাও আন্দোলন বলছে ৬৫ ভাগ কাজ। স্থানীয় সাংবাদিকরা ও জানিয়ে ৫০-৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন।
সোহেল মিয়া, (দোয়ারাবাজার) সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার হাওরের বোরো ফসল আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধানে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও চলছে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ।
গত বছর ১৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয় ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারিত থাকলেও এখনো শেষ হয়নি অধিকাংশ ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ। এতে বন্যার কবল হতে ফসল রক্ষায় শংকিত উপজেলার কৃষকরা।
উপজেলার কৃষকরা বলছেন, এবারও বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের কার্যকলাপের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে বাঁধের কাজে। বাঁধের পিআইসি গঠনে দলীয়করণ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে গণশুনানী ছাড়াই বাঁধ সংশ্লিষ্ট জমির কৃষকদের বাদ দিয়ে দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিয়ে পিআইসি গঠন করা হয়েছে। অনেক পিআইসিতে পর্যাপ্ত মাটি পড়েনি, মাটির বদলে বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নেহের নিগার তনু দাবি করছেন, বাঁধের কাজ ৯৯ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এবার পিআইসি গঠনে কোনো দলীয়করণ হয়নি। স্বচ্ছ ভাবে গণশুনানি করেই পিআইসি গঠন করা হয়েছে। বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণের বিষয়টিও অস্বীকার করেছেন তিনি। তিনি বলেন, সবাইকে দিয়েত পিআইসি গঠন সম্ভব নয়। যারা পিআইসি পায়নি তারাই বিভিন্ন ধরণের ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন। তবে পিআইসি নিয়ে দলীয় গ্রুপিংয়ের ফলে একই দলের দু’পক্ষের মাঝে মুখোমুখির ঘটনা ও ঘটেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড(দোয়ারাবাজার উপজেলা) সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ৪৭ টি পিআইসির মাধ্যমে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ চলছে। তার বরাদ্দ ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন পিআইসি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ পিআইসিতে এখনো ঘাস লাগানো হয়নি। অধিকাংশ বাঁধেই এখনো দুর্মুজ করা হয়নি। অনেকটাতে মাটির বদলে বালু দিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়েছে।
পিআইসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাঁরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছেন। বৃষ্টি না হওয়ায় ও আশপাশে ঘাস না পাওয়ার কারণে ঘাস জন্মাচ্ছে না।
তাদের দাবি. বাঁধের কাজ সম্পন্ন হয়েগেছে। এখন দুর্মুজ ও ঘাস লাগানোর কাজ চলছে।
উপজেলার সুরমা ইউনেয়নের কৃষক আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশে শান্তিপুরে কালনার হাওরের ক্লোজারে নামে মাত্র মাটি ফেলা হয়েছে। এখানে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি।’
দোয়ারাবাজারে বাঁধের কাজ ৬৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন’র সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদনূর আহমেদ । তিনি বলেন, বেশকিছু বাঁধ বালুমাটি দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এসব বাঁধ বন্যা ও অতি বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও বেশির ভাগ বাঁধেই কমপেকশন ও স্লোপের কাজে সমস্যা আছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা (পাউবো) কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বাঁধে মাটি ফেলার কাজ শতভাগ শেষ। এখন কেবল দুর্মুজ ও ঘাস লাগানোর কাজ চলছে। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ঘাস লাগানোর কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এজন্য কাজের সময়সীমা আরো ১০ দিন বাড়ানো হয়েছে।’
তিনি আরো জানান, ‘যেসব বাঁধের কাজের ব্যাপারে অনিয়মের অভিযোগ এসেছিল তাৎক্ষণিক ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কাজের টেকসই মান ঠিক রাখতে প্রতিনিয়তো মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে।