ধারাবাহিক পর্বের আজকে প্রথম পর্ব।
বাড়িতে যখন থেকে কথা শুরু হলো আমার বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে তখন থেকেই কেমন যেন মনে কিছু খুশি আবার কিছু ভয় কাজ করছিলো। আবার কিছু কষ্ট লাগতেছিলো। কিছু কথা ভেবে আনন্দও লাগতেছিলো।
খুশিটা হলো: আমি বিদেশ যাবো। বিমান ছড়বো, আকাশে উড়বো, না জানি বিমান ছড়তে কেমন লাগে। সারাজীবন দেখে আসছি পাখিরা আকাশে ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়। আমিও পাখির ন্যায় আকাশে উড়তে যাচ্ছি। যাই হোক ধৈর্য ধরতে হবে।
ভয়টা হলো: কোথায় যাচ্ছি আমি। অজানা এক দেশে, গিয়ে কি করবো? কাজ পাবো তো ঠিক মতো। নাকি অনেকের কাছে শোনা প্রবাসে অনেক কষ্ট। কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি না তো? এই ভেবে মনে অজানা এক ভয় শুরু হয়ে গেলো।
কষ্ট টা হলো: আহারে! জন্মের পর থেকে এই পর্যন্ত মা বাবা ভাই বোন আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব কাউকে ছেড়ে কোনো দিন আলাদা হই নাই। শুধু মাত্র মধ্যেভিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ার কারনে আজকে সবাইকে ছেড়ে ভিনদেশী হতে হচ্ছে। না জানি এ পথ কত দূর পর্যন্ত গিয়ে পৌছায়।
আনন্দটা হলো: দেশে নিজের কোনো ইনকাম নেই। দেশের মধ্যে চলাফেরা করতে গিয়ে মায়ের কাছে বার বার হাত পাতা, বাবার কাছে ভয়েও বলতাম না কিছু টকা দেন। নিজের সখ আললাদ চাহিদা মত পুরন করতে পারতাম না। বাবাকে বললে দিতো না যে এমন না। তবে কেমন যেন লাগতো অতিরিক্ত কিছু চাইতে গেলে। কেননা পাচ ভাই বোনের সংসার। আমাকে একা এতো কিছু দিতে গেলে বাবার কষ্ট হয়ে যাবে।
তাই এগুলো ভাবতে থাকি আর চিন্তা করি বিদেশে গিয়ে প্রচুর পরিমানে ইনকাম করে পরিবার কে অনেক ভালো রাখবো পাশাপাশি নিজের যত চাহিদা আছে মিটাবো। একটা ভালো মোবাইল কিনবো। প্রচুর পরিমানে ইনকাম করে দেশে এসে একটা মোটরসাইকেল কিনবো। পকেট ভর্তি টাকা নিয়ে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাবো। কত স্বপ্ন। এগুলো ভাবতেই কেমন ভালো লাগতেছে।
যখন থেকে প্রবাসের নাম নিলাম তখন থেকে সবাই আমার সাথে ভালো ব্যবহার শুরু করলো। এই আত্মীয় দাওয়াত দেয়, অই বন্ধু দাওয়াত দেয়। বন্ধুদের ঘুরাঘুরি চাহিদাও কেমন ভেড়ে গেলো। মা বাবার আদরও এবার ভাড়তে শুরু করলো।
যেমন, কি খাবি? মাছ খাবি না মাংস। কি পিঠা খাবি বাবা। তুর কি চাউলের পিঠা দিয়ে হাসের মাংস খাইতে মন চায়? নাকি চেপা সুটকির ভর্তা দিয়ে চিতল পিঠা। আরো কত কি।
বাব তুর খালায় তুর কথা বার বার জিগায় তাদের বাড়িতে কবে যাবি। তুর খালার নাকি তুরে দেখতে মন চাইতেছে।
এতো আপ্যায়ন দেখে মনে ভয়টা আরো ভেড়ে যাচ্ছিলো। আমাকে ওরা ভাল করে খাওয়া দাওয়া
কোথায় পাঠিয়ে দিচ্ছে। নাকি চির বিদায় করে দিচ্ছে। বার বার এ প্রশ্ন মনে আসতে শুরু করছে।
দ্বিতীয় পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন…