রিয়াজুল হক সাগর, রংপুর: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও মামলার তালিকাভুক্ত ৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাদের কেউ কেউ এখনো স্বপদে বহাল আছেন, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নিহতের পরিবার ও আইনজীবী।
২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট রংপুরে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে—একটি পুলিশের পক্ষ থেকে এবং আরেকটি আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলীর পক্ষ থেকে।
রমজান আলী দায়েরকৃত মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির আলীকে। এছাড়াও আরও ৩০–৩৫ জন অজ্ঞাতসহ মোট ১৭ জনকে আসামি করা হয়। এজাহারভুক্ত অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি আবদুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের তৎকালীন কমিশনার মো. মনিরুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা।
এজাহারভুক্ত ১০ পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে কেবল কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও এএসআই আমির আলীকে সাময়িক বরখাস্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি ৮ জনকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি, এমনকি তারা স্বপদে বহাল রয়েছেন।
মামলার তদন্তে থাকা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই অনেক আসামি পালিয়ে গেছে। তাদের পাসপোর্ট জব্দ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) তদন্তে যুক্ত হয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং তদন্ত চলছে।
এরপর ৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর-রশিদ তাজহাট থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায়ও অভিযুক্তদের মধ্যে ৮ জন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন, যাদের নাম আগের মামলার আসামি তালিকায়ও রয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী রোকনুজ্জামান বলেন, “১০ মাসেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না থাকায় আমরা হতাশ। এই মামলায় বিচার না হলে জুলাই আন্দোলনের ন্যায়বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হবে।”
এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে দ্রুত তদন্ত শেষ করে আসামিদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন নিহতের পরিবার ও সহযোদ্ধারা।