রিয়াজুল হক সাগর, রংপুর: ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা, ভাংচুর ও বন্ধ করার প্রতিবাদে রংপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি। পরে সাত দফা দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টাসহ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্বারকলিপি দেন তারা।
বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে রংপুরের আট উপজেলা থেকে ইটভাটা মালিক-শ্রমিকরা ব্যানার-ফেস্টুন ও প্লাকার্ড হাতে নিয়ে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় দাবি আদায় না হলে ঈদের পর বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন সমিতির নেতৃবৃন্দ।
এরপর তারা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সালের মাধ্যমে ৭ দফা দাবি সম্বলিত স্বারকলিপি প্রদান করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ইটপ্রস্তুতকারী মালিক সমিতি রংপুর জেলার সহ-সভাপতি আবু নাসের শাহ মো. মাহবুবার রহমান, ওয়াহেদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক এম আজিজুল হক, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল্লাহেল কাফিসহ অন্যরা। স্বারকলিপিতে বলা হয়, ২০১৩ সালের ইটাভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনের জিগজ্যাগ ভাটা বৈধ পদ্ধতি উল্লেখ থাকলেও এই আইনের ‘দূরত্ব নির্দিষ্ট’ করণের কারণে দেশের কিছু জিগজ্যাগ ইটভাটার মালিকরা ছাড়পত্র পাচ্ছে না।
ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর হাইব্রিড কিলুন এবং ট্যানেল কিলনের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ এলাকার দূরত্ব এক হাজার মিটার পরিবর্তে ৪’শ মিটার নির্ধারণ করেছে। তাই জিগজ্যাগ ভাটারর জন্য নিষিদ্ধ এলাকায় ৪’শ মিটার ও বনের দূরত্ব ৭’শ মিটার করতে হবে। জিগজ্যাগ ইটভাটায় মোবাইল কোর্ট বন্ধ করতে হবে, অন্যত্থায় ইট প্রস্তুতকারীরা ভ্যাট-ট্যাক্স দেওয়া বন্ধ করবে।ইটভাটা বন্ধ করতে হলে সরকারিভাবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করা, মাটি টাকার জন্য ডিসির প্রত্যয়নপত্র নেওয়ার বিধান বাতিল করা, পরিবেশ ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্রাদি ইস্যু ও নবায়নের সময় কেন্দ্রীয় ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির প্রত্যয়নপত্র বাধ্যতামূলকভাবে জমা দেয়া, ইটভাটাকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা এবং ইটভাটা পরিচালায় দীর্ঘ মেয়াদী পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানানো হয়।
রংপুর জেলা ইটপ্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম আজিজুলক হক বলেন, রংপুর বিভাগে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। এসব কাজে রংপুরের ভাটা থেকে বিপুল পরিমাণ ইট স্বল্পমূল্যে সেখানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে করে সরকারের উন্নয়ন ব্যয় কমছে। ইটশিল্পের সাথে রংপুরের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক জড়িত রয়েছে।
বিভিন্ন সময় অভিযানের নামে ইটভাটায় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর হানা দিয়ে জেল-জরিমানা আদায় করছে।সম্প্রতি ইটভাটায় মোবাইল কোর্ট, জরিমানা, ভাংচুর ও বন্ধ করে দেওয়া কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটি যদি অবিলম্বে বন্ধ করা না হয়, তবে ঈদের পর বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে ইট প্রস্তুতকারক মালিক-শ্রমিকরা।
এদিকে সারা দেশের সব অবৈধ ইটভাটা চার সপ্তাহের মধ্যে গুঁড়িয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সব বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।গত মাসের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করে আগামী ১৭ মার্চ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।