মোঃ তাজিদুল ইসলাম: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ–ওসমানীনগর) আসনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আলেম ও বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ড. মুফতি হাফিজ লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী। তিনি রিকশা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে নিশ্চিত করেছে দলীয় সূত্র।
বিশ্বনাথ উপজেলার রাজনগর গ্রামের সন্তান ড. ক্বাসিমীর পিতা ছিলেন মরহুম আলহাজ্ব মৌলভী আলতাফুর রহমান, যিনি স্থানীয়ভাবে সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তাঁর বড় ভাই মাওলানা শায়েখ হাবিবুর রহমান ফারুক্ব দীর্ঘদিন বিশ্বনাথের জামেয়া মুহাম্মদিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মুফতি ক্বাসিমী প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন জামেয়া দারুল উলূম মাদানীয়া, বিশ্বনাথ মাদ্রাসায়। পরবর্তীতে পড়াশোনা করেন জামেয়া তওক্কুলিয়া রেঙ্গা, জামেয়া ক্বাসিমুল উলূম দরগাহ হযরত শাহজালাল (রহ.) সিলেট, এবং বিশ্বনাথ সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলীম সম্পন্ন করেন।
এরপর রাজধানীর জামেয়া রহমানিয়া আরাবিয়া, ঢাকা থেকে দাওরায়ে হাদীস (সমমান মাস্টার্স) সম্পন্ন করে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ বোর্ডে প্রথম শ্রেণি অর্জন করেন।
১৯৯৬ সালে ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে হাদীসে বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করেন এবং ১৯৯৭ সালে পাকিস্তানের জামেয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া, করাচি থেকে ইফতা বিভাগে উচ্চতর কোর্স শেষ করেন।
শিক্ষা ও গবেষণার ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় অবস্থিত ইন্টারফেইথ থিওলজিক্যাল সেমিনারি থেকে ইসলামিক স্টাডিজ ও হাদীস বিষয়ে দুইটি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার থিসিস ছিল- Biography of Six Imams of Hadith / Biography of Four Imams of Madhab দুটি বই-ই বাংলাদেশে প্রকাশিত হয়েছে এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রকমারি ডটকমে ই-বুক আকারে পাওয়া যাচ্ছে।
ড. ক্বাসিমীর পরিবার দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা, সমাজসেবা ও ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করে আসছে।
তাঁর পিতা আলহাজ্ব আলতাফুর রহমান ও চাচা আলহাজ্ব সুনাহর আলী ছিলেন বিশ্বনাথ থানার বিশিষ্ট সমাজসেবক।
বড় চাচা আলহাজ্ব তবারক আলী ছিলেন সিলেট জেলার অন্যতম সালিশ বিচারক, যিনি সালিশি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বহু পরিবারে শান্তি ফিরিয়ে এনেছেন।
পূর্ব পাকিস্তান আমলে বিলেতে অবস্থানকালে পিতা আলতাফুর রহমানের অর্থায়নে স্থানীয় মাতব্বরদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিশ্বনাথ নতুন বাজার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তবারক আলী ও তাঁর ভাইরা।
পরবর্তীতে তাঁদেরই উদ্যোগে বিশ্বনাথ জামেয়া মাদানিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়, যার দফতর আজও তাঁদের অনুদানকৃত জমিতে অবস্থিত।
১৯৯৮ সালে শিক্ষকতা জীবনের সূচনা করেন জামেয়া মুহাম্মদিয়া আরাবিয়া, বিশ্বনাথে। একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং সেখানে আল-আমিন ইসলামিক সেন্টার ও আস-সাফা ইসলামিক সেন্টার, নিউইয়র্কে শিক্ষক ও প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব পালন করেন।
বর্তমানে তিনি- ইউনাইটেড উলামা কাউন্সিল অব ইউএসএ ইনক.-এর সভাপতি, ইফতা বোর্ড ইন্টারন্যাশনাল, নিউইয়র্ক-এর মহাসচিব, বিশ্বনাথ প্রবাসী কল্যাণ সমিতি ইউএসএ ইনক.-এর আজীবন সদস্য,নিউইয়র্ক সিটির রেজিস্টার্ড কাজী ও চাপ্লেন, নিউইয়র্ক স্টেট ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন-এর ইন্সপেক্টর।
এছাড়া তিনি আই টিভি ইউএসএ, দ্বীন টিভি ইউএসএ, টাইমস টিভি ইউএসএ, ফক্স নিউজ, পিবিএস নিউজ, চ্যানেল ১৩ ও সিলেট ডাইরেক্টসহ একাধিক আন্তর্জাতিক ও দেশীয় টেলিভিশনে ইসলামিক আলোচক ও উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত মুখ।
২০০৬ সাল থেকে ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথে এলাকার উন্নয়ন ও মানবকল্যাণে নিবেদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ড. মুফতি ক্বাসিমী।
তাঁর সামাজিক উদ্যোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- দরিদ্র পরিবারের বিয়ের সম্পূর্ণ খরচ বহন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পুঁজি প্রদান, অসুস্থদের চিকিৎসা সহায়তা, আশ্রয়হীনদের জন্য ঘর নির্মাণ, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যয় বহন, রমজান ও ঈদে অসহায়দের খাদ্য ও অর্থ সহায়তা, ঈদুল আজহায় ফ্রি কুরবানির আয়োজন, করোনাকালে মুসলিম ও হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের সহায়তা, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণ।
দীর্ঘ প্রবাসজীবনে ধর্মীয় নেতৃত্ব, শিক্ষা ও সমাজসেবায় অসামান্য অবদান রাখার পর এবার তিনি মাঠে নেমেছেন দেশের রাজনীতিতে।
ন্যায়ের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা ও মানবকল্যাণভিত্তিক উন্নয়ন—এই অঙ্গীকার নিয়েই তিনি সিলেট-২ আসনে রিকশা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ড. মুফতি হাফিজ লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী বলেন, আমার রাজনীতি ক্ষমতার নয়—সেবার। আমি চাই ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথকে একটি শিক্ষিত, ন্যায়ভিত্তিক ও উন্নত অঞ্চলে পরিণত করতে।