দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ): সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সমুজ আলী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করেছেন উপজেলার বড়খাল স্কুল এন্ড কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ও প্রগতি স্কুল এন্ড কলেজ ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নবগঠিত কমিটির ছাত্রদল নেতারা।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সমুজ আলী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে বর্তমান ও সাবেক সাধারণ ছাত্রজনতা।
এর আগে গত ২৭ জুলাই ( রবিবার) সন্ধায় সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুমিত ইসলাম ও সদস্য সচিব তারেক মিয়া স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যাডে দোয়ারাবাজার উপজেলার প্রতিটা স্কুল এন্ড কলেজ ও আলিম মাদ্রাসা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় ছাত্ররাজনীতির কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে উঠে নানান সমালোচনার ঝড়। এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার কারিরা নিন্দা জানিয়ে স্কুল -মাদ্রাসা হতে ইসলামিক শিক্ষা’র বাহিরে এসব রাজনীতি কর্মকান্ড বন্দের দাবি জানান।
বিক্ষোভে সমুজ আলী স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘শিক্ষাঙ্গনে দলীয় রাজনীতি ছাত্রদের দুর্বৃত্ত বানায়’, ‘মত-পথ-রাজনীতি যারা যার, দেশ-শিক্ষাঙ্গন সবার’, ‘শিক্ষাঙ্গনে দলীয় সংঘাত ধ্বংসাত্মক, শিক্ষাঙ্গন থাকুক মুক্ত নিরাপদ’, ‘শিক্ষাঙ্গন দলীয় রাজনীতির স্থান নয়’, ‘শিক্ষাঙ্গন দলীয় আধিপত্যের জায়গা নয়’, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দলীয় রাজনীতির আখড়া করে যারা, জীবন-দেশ-শিক্ষার শত্রু তারা’ ইত্যাদি স্লোগানে আল্টিমেটাম দেয় শিক্ষার্থীরা।
বক্তারা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের রাজনীতির চর্চা অবশ্যই থাকবে থাকতে হবে তবে সেটা হতে হবে কেবল একাডেমিক ও সংঘাতমুক্ত এবং নিরাপদ সৌহার্দ্যমূলক। প্রতিষ্ঠানে কোনো রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের দলীয় সাংগঠনিক মাঠের রাজনীতির কর্মসূচি ভয়ংকর ধ্বংসাত্মক, যা কেবল গুণ্ডাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করে প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য দলীয় রাজনীতি নয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সব অবাঞ্ছিত সংঘাত ও দলীয় আধিপত্য থেকে মুক্ত না রাখলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আসল উদ্দেশ্য ধ্বংস হয়ে অসৎ স্বার্থের বিপজ্জনক হাতিয়ার হয়ে যাবে।
বিক্ষোভকারী সমুজ আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের বর্তমান, সাবেক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দাবি,সমুজ আলী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে অতীতে কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ড ছিলো না। এবং বর্তমান বা ভবিষ্যতেও কোনো রাজজনেতিক কর্মকান্ড চলতে দেওয়া হবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের হুমকি ও থ্রেড দিয়েছে যারা তাদের বক্তব্যের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আগামীকাল থেকে ২৪ চব্বিশ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্রদল নেতা আল আমিন চৌধুরি, ইসতিয়াক আজাদ রাফি কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীকে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে । তাদের এমন বক্তব্য প্রত্যাহার করে জন জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যতায় কঠিন কর্মসূচির ডাক দিতে বাধ্য হবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এদিকে,কমিটির তালিকা প্রকাশের সাথে সাথে উপজেলার বড়খাল স্কুল এন্ড কলেজ ছাত্রদলের কমিটি অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে হয়েছে দাবি করে রবিবার রাতেই বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাবাজার ইউনিয়ন ছাত্রদল। এতে তারা অভিযোগ তুলেন,অসৎ পন্থায় বড়খাল স্কুল এন্ড কলেজ ছাত্রদলের কমিটি করা হয়েছে। যে কমিটির সভাপতি হয়েছে সে নিজেও জানেনা যে কিভাবে কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি হলো।
এতে বঞ্চিত হয়েছে উপযুক্ত ত্যাগিরা। এসময় বক্তব্য রাখেন বাংলাবাজার ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি শিব্বির আহমদ,সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ রামিম সানি, ইউনিয়ন ও কলেজ শাখার ছাত্রদলের কর্মীরা।
এতে সোমবার নবগঠিত বড়খাল স্কুল এন্ড কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মাসুম রেজা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজে স্বইচ্ছায় পদত্যাগ করে বলেন,বড়খাল স্কুল এন্ড কলেজের বর্তমান নতুন কমিটির সভাপতি পদ আমাকে দেয়া হয়েছে । তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সকলের প্রতি।
কিন্তু আমার পরিবার এই রাজনীতিতে আমাকে কঠুর ভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, আমি যেনো কোনো প্রকার রাজনীতিতে যুক্ত না থাকি, ইতিমধ্যে আমি পারিবারিকভাবে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। আমার পরিবার আমাকে বার বার বলতেছে এসব রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার জন্যে।
এতে আমি সকল বিষয় বিবেচনা করে আমি আমার সৎ জ্ঞানে,নিজ ইচ্ছায় এই কলেজ কমিটি থেকে অব্যাহত নিচ্ছি ।
আমার কোনো ভূল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন, আমার পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না সুতরাং এই বিষয় দয়া করে আর কেউ আমাকে কোনো প্রকার জিজ্ঞাসাবাদ বা প্রশ্ন করবেন না, আমার জন্য দোয়া করবেন ভবিষ্যতে যেনো ভালো কিছু করতে পারি, ধন্যবাদ সবাইকে, ভূল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। আর সকলের স্নেহ ও ভালোবাসায় সকল সময় রাখবেন।
একই সময়ে উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের প্রগতি স্কুল এন্ড কলেজ শাখা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোনায়েম ওয়াসিফ মিকদাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে লিখেন, আমি মোনায়েম ওয়াসিফ মিকদাদ, প্রগতি স্কুল এন্ড কলেজ দোহালিয়ার একজন সাধারণ ছাত্র। আমি আজকে অত্যন্ত বিস্মিত ও বিব্রত হয়েছি যখন শুনলাম আমাকে ছাত্রদলের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক” হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।আমি এই বিষয়ে কোনো রকম অবগত নই, আমাকে জিজ্ঞাসাও করা হয়নি, এবং আমি এই কমিটির সাথে কোনো সম্পর্কও রাখি না। আমার পরিবার আমাকে এই কলেজে ভর্তি করানোর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল এখানকার রাজনীতি মুক্ত পরিবেশ। আমিও নিজে কখনো কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হইনি এবং আগ্রহীও না।কমিটিতে আমার নাম ব্যবহারে প্রতিবাদ জানাই এবং অনুরোধ করছি যেন আমার নাম এই ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হয়।
শিক্ষকদের দৃষ্টি আমার প্রতি যেভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, তা আমাকে কষ্ট দিয়েছে। আমি একজন ছাত্র হিসেবে শুধুমাত্র আমার পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে চাই এবং কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না।সবাইকে অনুরোধ, কেউ যেন ভুল বোঝাবুঝি না করেন। আমি নই রাজনীতির অংশ, আমি শুধু একজন শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে, স্কুল ক্যাম্পসে এমন দলীয় ছাত্ররাজনীতি বন্দে বিবৃতি দিয়েছেন উপজেলার সমুজ আলী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ এবং দ্বীনেরটুক দারুল কোরআন আলিম মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানের প্যাডে প্রকাশিত বিবৃতিতে তারা লেখেন, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমুজ আলী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ শাখা এবং দ্বীনেরটুক দারুল কোরআন আলিম মাদ্রাসা শাখা নামে একটি কমিটি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যা ইতোপূর্বে কখনো হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন যে প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থে উক্ত প্রতিষ্ঠান সম্পন্ন রাজনীতি মুক্ত থাকবে। সাংগঠনিক কোন কমিটি এখানে রাজনৈতিক কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেনা।