চট্টগ্রাম নগরে দুর্গা পূজার ১টি মণ্ডপে অনুষ্ঠানের মঞ্চে ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেছেন ১টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা। বৃহস্পতিবারের (১০ অক্টোবর ২০২৪) এ ঘটনার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক ভাবে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয় তা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাতেই ওই পূজামণ্ডপে গিয়ে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ‘ফরিদা খানম’। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর ২০২৪) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে নগরের রহমত গঞ্জেরজে এম সেন হলে ঘটেছে ঘটনাটি। কয়েক জন সেখানকার লোকজন জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম ‘কালচারাল একাডেমি’ নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের ৬ সদস্য অনুষ্ঠানে দুটি গান পরিবেশন করেন। তার মধ্যে একটি গান ছিল “শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম”।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এ ঘটনার প্রায় তিন মিনিটের একটি ভিডিওটিতে দেখা যায়, মণ্ডপের অনুষ্ঠানের মঞ্চে গান পরিবেশন করছেন ৬ জন তরুণ। এ সময় ১টি ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেন তারা। আশপাশে উপস্থিত কয়েক জনকে সেই ঘটনা মুঠো ফোনে ধারণ করতে দেখা যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম “কালচারাল একাডেমি”র সভাপতি ‘সেলিম জামান’ বলেন, পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ‘সজল দত্তের’ আমন্ত্রণেই সেখানে সংগীত পরিবেশন করতে গেছেন তারা। সেখানে ২টি গান পরিবেশন করা হয়েছে, ২টিই সম্প্রীতির সংগীত। কেউ কেউ ভিডিও এডিট করে অপ’প্রচার চালাচ্ছে।
তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই অনুষ্ঠানের ভিডিও যাচাই করে ‘ফ্যাক্ট চেকিং’ প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার তাদের ফেসবুক পেজে জানিয়েছে, পূজামণ্ডপে গানের ভিডিওটি আসল, এডিটেড নয়।
পরে চট্টগ্রাম ‘কালচারাল একাডেমির’ সঙ্গে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না, জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর (উত্তর) ছাত্রশিবিরের সভাপতি ‘ফখরুল ইসলাম’ বলেন, এটি ছাত্রশিবিরের কোনো অঙ্গসংগঠন নয়। তবে জামায়েতে ইসলামীর ১জন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেছেন, চট্টগ্রাম ‘কালচারাল একাডেমি’ ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ সমর্থিত ১টি সাংস্কৃতিক সংগঠন।
এদিকে পূজা উদ্যাপন পরিষদ সূত্র বলছে, সন্ধ্যায় মঞ্চে নৃত্য-নাচের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। এ সময় কয়েকজন তরুণ সেখানে উপস্থিত হয়ে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করবেন বলে মঞ্চে ওঠেন। পরে তারা ২টি গান পরিবেশন করেন। এরপর তারা ‘ধন্যবাদ’ দিয়ে নেমে চলে যান।
ওই ছয় জন তরুণকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কি না, প্রশ্ন করা হলে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের অর্থ সম্পাদক ‘সুকান্ত মহাজন’ বলেন, ওই তরুণেরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তকে বলেছেন, তারা মঞ্চে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করবেন। পরে তারা উঠে গান শুরু করেন এবং ২টি গান পরিবেশন শেষে তারা চলে যান। এ বিষয়ে জানতে ‘সজল দত্তে’র সঙ্গে একাধিকবার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রত্যক্ষ’দর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনার সময় সেখানে চট্টগ্রামের আদালত ঘোষিত সিটি মেয়র ও নগর বি এনপির সাবেক আহ্বায়ক ‘ডা. শাহাদাত হোসেন’ এবং ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর’ চট্টগ্রাম নগরের ‘আমির শাহজাহান চৌধুরী’ উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ‘শাহাদাত হোসেন’ ফোন ধরেননি। আর জামায়াত নেতা ‘শাহজাহান চৌধুরী’ বলেছেন, তিনি এদিন কোনো পূজামণ্ডপে যাননি। পূজামণ্ডপে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর রাত সাড়ে দশটার দিকে ঘটনাস্থলে যান চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ‘ফরিদা খানম’। এ সময় তিনি বলেন, এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের ২৪ – ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আটিক করা হবে। এ বিষয়ে রাতের মধ্যেই মামলা নেওয়ার জন্য পুলিশ কমিশনার কে জানানো হবে।
এ দিকে পূজা মণ্ডপে “ইসলামি গান” পরিবেশিত হওয়ায় পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক “সজল দত্ত” কে বরখাস্তের ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি “লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য”। রাতেই নগরের জে এমসেন হলের পূজামণ্ডপের মঞ্চে তাকে বরখাস্তের ঘোষণা দেন তিনি।