স্টাফ রিপোর্টার: সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যকেন্দ্র জাউয়াবাজারে আবারও আদালত অবমাননার ঘটনা ঘটেছে। আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রতিপক্ষের দোকানকোটা দখলের চেষ্টায় এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জাউয়াবাজারের একটি দোকানকোটা নিয়ে ব্যবসায়ী রওশন খান সাগর গং এবং গুলনাহার বেগম গং-এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মামলা-মোকদ্দমা চলছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী গত ১৪ মে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রওশন খান সাগর গংদের পক্ষে দোকানকোটার মালিকানা নিশ্চিত করেন। এরপর থেকে তারা নির্বিঘ্নে দোকানটি ব্যবহার করে আসছিলেন।
কিন্তু ১৩ অক্টোবর সোমবার দুপুরে গুলনাহার বেগমের পক্ষে থাকা রফিক মিয়া (৪৮), সুমন জাকারিয়া (৩৫), **আনহার মিয়া (২৩)**সহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন ভাড়াটে সন্ত্রাসী জোরপূর্বক দোকানকোটায় প্রবেশ করে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। হামলার ঘটনাটি দোকানে থাকা সিসি ক্যামেরায় ধারণ হয়।
ঘটনার পর পুলিশ এসে হামলাকারীদের নিবৃত্ত করে। এ ঘটনায় রওশন খান সাগর বাদী হয়ে ছাতক থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-২০(৩১২)/২৫, তারিখঃ ১৮/১০/২০২৫)।
মামলার আসামিরা পুলিশি গ্রেফতারের আগেই গত ২২ অক্টোবর সুনামগঞ্জ জেলা আদালত থেকে জামিন নিয়ে আসে। এরপর তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
২৯ অক্টোবর বুধবার দুপুরে আসামিপক্ষ তালাবদ্ধ দোকানকোটার সামনে নতুন সাইনবোর্ড স্থাপন করে জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে জাউয়াবাজার তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ফোর্স দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আদালতের নির্দেশ অমান্য না করার নির্দেশ প্রদান করে।
এ বিষয়ে ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শফিকুল ইসলাম খান বলেন, জোরপূর্বক দোকান দখলের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ঘটনাস্থলে যাই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাউয়াবাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমদ বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে রওশন খান সাগর গং দোকানকোটায় অবস্থান করছেন। প্রতিপক্ষের লোকজন বারবার হামলা ও দখলের চেষ্টা করে বাজারের শান্তি বিঘ্নিত করছে, যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এ দোকানকোটা নিয়ে এর আগেও ২০২২ সালের ১৬ এপ্রিল রাতের আঁধারে অনুরূপ আদালত অবমাননার ঘটনা ঘটেছিল।
গুলনাহার বেগমের ছেলে নুরুল আলীর নেতৃত্বে একদল ভাড়াটে সন্ত্রাসী তখন সরকারি সিলগালা ভেঙে দোকান দখলের চেষ্টা চালায়। পরে পুলিশ তদন্ত শেষে ১৮৮ ধারায় আদালতে প্রতিবেদন দেয়, যা বর্তমানে বিচারাধীন।
একই দোকানকোটা নিয়ে বারবার হামলার ঘটনায় জাউয়াবাজারের ব্যবসায়ীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, মামলাটি যেহেতু আদালতে বিচারাধীন, তাই এর সুযোগ নিয়ে হামলা ও দখলের চেষ্টা করা বাজারের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে।
বণিক সমিতি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের কাছে কঠোর নজরদারি ও আইনগত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর আদালতের আদেশ অমান্য করে বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে।



