দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ): সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার খাসিয়ামারা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ভিডিও করায় ইব্রাহিম খলিল নামের একজনকে তুলে নিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) বিকাল ৪ টায় খাসিয়ামারা নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের সময় ইব্রাহিম খলিল তা ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করছিলেন। এসময় বালু উত্তোলনে জড়িত কয়েকজন ব্যক্তি তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে মারধর করেন।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি ইব্রাহিম খলিলকে টেনে হিঁচড়ে একটি স্থানে নিয়ে যাচ্ছে এবং সেখানে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে আটকে রাখে। পরে স্থানীয় লোকজন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
আহত ইব্রাহিম খলিল জানান, “দুইদিন আগে জেলা প্রশাসক মহোদয় এসে ড্রেজার বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু আজ তারা আবার ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলছিল। আমি ভিডিও করতে গেলে তারা আমার উপর হামলা করে। জুয়েল, আঙ্গুর, ও আলমগীর সহ কয়েকজন আমাকে মারধর করে। তারপর আমাকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
খাসিয়ামারা বালু মহলের ইজারাদার শাহ জালাল কনস্ট্রাকশনের মালিক ও সুরমা ইউপির চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না ড্রেজার মেশিন গুলো আমার না জুয়েলের।
ড্রেজার মালিক জুয়েল মিয়া বলেন, আমি ঘটনার স্থলে ছিলাম না, ড্রেজার বন্ধ আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নদীর তীরবর্তী স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান,আমরা প্রতিবাদ করলেই তারা হুমকি-ধমকি দেয়, এমনকি অনেকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও হয়েছেন। ফলে আমরা ভয়ে মুখ খুলতে পারি না। একদিকে ডিসি স্যার পরিদর্শন করে গেছেন অন্যদিকে তারা ড্রেজার মেশিনের সংখ্যা বাড়িয়ে বালু উত্তোলন শুরু করে।
দোয়ারাবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল হক জানান, খাসিয়ামারা নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে এক যুবককে মারধর করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবিষয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরূপ রতন সিংহ বলেন,খাশিয়ামারা নদীতে ড্রেজার মেশিন ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ড্রেজার মেশিন চলার সংবাদ শুনে গঠনার স্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। কেউ যদি প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে ড্রেজার চালায়, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, খাসিয়ামারা নদীতে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বন্ধের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুপ রতন সিংহ এবং দোয়ারাবাজার থানার ওসি জাহিদুল হক অভিযান চালিয়ে তিনটি ড্রেজার জব্দ করেন এবং একজনকে আটক করেন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করায় গত মঙ্গলবার সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়। পরে বুধবার জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া নদী পরিদর্শন করে ড্রেজার মেশিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন এবং নদীতে থাকা রাবারড্রাম বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইজারাদার কর্তৃক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে তদন্তের জন্য এলজিইডিকে নির্দেশ দেন।