নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলা আদালত প্রাঙ্গণে প্রকাশ্যে সাবেক স্বামীর ছুরিকাঘাতে শরীফা আক্তার (২৮) নামে এক নারীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শরীফা মৃত্যুবরণ করেন।
রক্তাক্ত সকাল— আদালত প্রাঙ্গণজুড়ে কান্নার সুর সকালটা ছিল একেবারেই স্বাভাবিক। ধর্মপাশা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে অন্যান্য দিনের মতোই মানুষের ভিড়। ঠিক সেই সময়েই ঘটে যায় চরম এক ট্র্যাজেডি— এক তরুণীর আর্তচিৎকারে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা।
পেছন থেকে ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শরীফা আক্তার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ছুরিকাঘাতের পর পালানোর চেষ্টা করলে লোকজন ধাওয়া করে হামলাকারী আক্তার হোসেনকে (৪০) ধরে ফেলে এবং অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
বিবাহ বিচ্ছেদ আর আইনি লড়াইয়ের করুণ পরিণতি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার দেওথান গ্রামের রমজান আলীর মেয়ে শরীফা আক্তারের বিয়ে হয় প্রায় ১০ বছর আগে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার কান্দাপাড়া গ্রামের হেকিম মীর্জার ছেলে আক্তার হোসেনের সঙ্গে।
দাম্পত্য জীবনে তাদের একটি সাড়ে তিন বছর বয়সী কন্যা সন্তান রয়েছে।
তবে দীর্ঘদিনের পারিবারিক কলহে তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। প্রায় এক বছর আগে শুরু হয় অশান্তি, আর ছয় মাস আগে শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদে গড়ায় সেই সম্পর্ক।
বিচ্ছেদের পর মেয়ের হেফাজত নিয়ে আদালতে মামলা করেন আক্তার হোসেন। সোমবার ছিল সেই মামলার হাজিরার দিন— আর সেদিনই চিরবিদায় নিলেন শরীফা।
শেষ দেখা: মেয়েকে কোলে নিয়েই আদালতে আসা
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেদিন সকালে সাড়ে তিন বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে আইনজীবীর পরামর্শের জন্য আদালত প্রাঙ্গণে অপেক্ষা করছিলেন শরীফা।
অচেতন মুহূর্তে পেছন থেকে এসে সাবেক স্বামী আক্তার হোসেন তার পিঠে একাধিক ছুরিকাঘাত করেন।
চারদিকে চিৎকার, হৈচৈ শুরু হয়। আদালত চত্বরে মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে মুমূর্ষু শরীফাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর দুইটার দিকে তার মৃত্যু হয়।