মাহফুজ কাউসার ছাদি: সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের অপরিকল্পিত নির্মাণ ও নিম্নমানের কাজের কারণে সৃষ্ট যানজট ও ব্যবহার-অনুপযোগিতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে দক্ষিণ সুরমা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে আয়োজিত এ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি মাওলানা লোকমান আহমদ এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুজ্জামান জোয়াহির লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সমিতির পক্ষ থেকে দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ হওয়া ছাত্র, জনতা ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিকদের স্মরণ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা উল্লেখ করেন, ২০১৩ সাল থেকে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি জেলার অন্তর্গত ১৩টি রোড উপ-কমিটির সমন্বয়ে একটি নির্দলীয় ও গণতান্ত্রিক মালিক সংগঠন হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। বিগত ৫ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা ও কাউন্সিলের মাধ্যমে ৫৩ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়, যা বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছে। সমিতি দীর্ঘদিন ধরে সিলেট জেলার ১৩টি রোড উপ-কমিটির নেতৃত্বে পরিবহন সংশ্লিষ্ট সমস্যার সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে এবং যানজট নিরসনে স্থানীয় প্রশাসন, মালিক ও শ্রমিকদের সমন্বয়ে অনেক ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
তবে বক্তারা অভিযোগ করেন যে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণের ফলে অধিকাংশ গাড়ি সড়কে যত্রতত্রভাবে দাঁড় করিয়ে পরিচালনা করতে হচ্ছে, যা পরিবহন ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এছাড়া, নিম্নমানের নির্মাণের ফলে টার্মিনাল এখনই অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সম্মেলনে প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে অবৈধ সিএনজি চলাচল বন্ধের আহ্বান রয়েছে, যেখানে হাইওয়েতে রেজিস্ট্রেশনবিহীন, অন্য জেলার ও অদক্ষ চালকদের মাধ্যমে পরিচালিত সিএনজির কারণে দুর্ঘটনার হার বাড়ছে এবং হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে এই অনিয়ম বন্ধের দাবি জানানো হয়। পাথর কোয়ারি পুনরায় চালুর জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বক্তারা উল্লেখ করেন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ইজারা বন্ধের নির্দেশ বাতিল করে সিলেট অঞ্চলের পাথর ব্যবসায়ীদের বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে আবার তা স্থগিত করা হয়।
এছাড়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবি তুলে ধরা হয়, যেখানে পরিবহন আইনে বাসের আয়ুকাল ২০ ও ট্রাকের ২৫ বছর নির্ধারণ এবং ফিটনেস সনদ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনার সিদ্ধান্তকে ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করা হয়, যার বিরুদ্ধে ১ জুলাই প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির তুলনায় পরিবহন ভাড়া না বাড়ায় মালিকরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন মর্মে ভাড়া বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি দুর্ঘটনা রোধে চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিদ্যুৎ খাতে প্রিপেইড মিটারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠায় সংগঠনের পক্ষ থেকে দ্রুত এ ব্যবস্থার প্রত্যাহার দাবি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সভাপতি মাওলানা লোকমান আহমদ সম্পর্কে ছড়ানো তথ্য যে তিনি কোনো গাড়ির মালিক নন, তা “ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে উল্লেখ করা হয়। তিনি ২০০২ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পরিবহন সেক্টরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলে জানানো হয়। সম্মেলনের শেষাংশে প্রশাসন, গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরিবহন খাতকে সুশৃঙ্খল রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এসময় সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সদস্য ও জেলার অন্তর্গত বিভিন্ন উপ-কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।