Shopping cart

আহত শতাধিক, উপরমহলের চোখ বোতল কান্ডে

মে ১৫, ২০২৫

মুসফিকুর রহমান, জবি প্রতিনিধি: ‘হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের মানবিক সংকটের কথা বলতে চেয়েছে এটা তাদের চোখে পড়েনি। কিভাবে খাদ্য ও বাসস্থানের অর্থ যোগান করতে যেয়ে তাদের সম্ভাবনা, স্বাস্থ্য, শখ বিসর্জন দিচ্ছেচোখে পড়েনি। লাল ফিতার দৌরাত্মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিভাবে হেনস্তা হচ্ছেন দিনের পর দিন, তাদের সেটাও চোখে পড়েনি। চোখে পড়েছে বোতল কান্ড। এটা মহা অন্যায়। তাদের চোখে পড়েনি লাঠি আর টিয়ার গ্যাস খেয়ে পেট ভড়ানো ছেলে-মেয়েগুলোর সাথে উপদেষ্টা কেমন ‘হয়তো উষ্কানি’ ব্যবহার করে প্রহসন করলেন।’

গতকাল বুধবার (১৪ মে) তিন দফা দাবিতে শান্তিপূর্ণ ভাবে যমুনা অভিমুখে লংমার্চে পুলিশের হামলায় আহত হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ শতাধিক। সংবাদ সংগ্রহকালে গুরুত্বর আহত হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বাংলা ট্রিবিউনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক সুবর্ণ আসসাইফ। আজ বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ভোরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া স্ট্যাটাসে এসব কথা লেখেন তিনি।

তিনি লেখেন, ‘শিক্ষার্থীদের জটলার মধ্যে সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ হলো। একটা মেয়ের পায়ে জখম হয়েছে। পুলিশকে ইট মারতেও দেখেছি। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে ইচ্ছাকৃতভাবে টিয়ার শেল শরীরে মারা হয়েছে। এগুলো ছত্রভঙ্গ করার কেমন নিয়ম বলেন? কয়েকদিন আগেও সচিবালয়ে এক পুলিশ সদস্যদের ছত্রভঙ্গ করাকে আমরা প্রশংসা করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকরা যারা ছিলেন, সবাই কম-বেশি আহত। গুরুত্বর আহত প্রায় ত্রিশজন শিক্ষার্থী। ছোটো জখম মিলিয়ে আহত শতাধিক। সাংবাদিক আহত ৫ জন। আমাদের সত্তোর ছোঁয়া উপাচার্য স্যারকে ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয়েছে বাইরে। উপদেষ্টা তাকে ঠিক-ভুল শিখিয়েছেন। স্যারের অপরাধ তার বিরুদ্ধে কোনো অর্থ ও চারিত্রিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ নেই। উনি জানেন না সততা ও নৈতিকতার বাইরে যেয়ে কিভাবে কাজ আদায় করতে হয়, ভ্যালু তৈরি করতে হয়।’

সুবর্ণ বলেন, ‘এতো কিছু আমাদের ইমাম হাসনাত, সারজিস, হান্নান মাসুদদের চোখে পড়েনি। হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের মানবিক সংকটের কথা বলতে চেয়েছে এটা তাদের চোখে পড়েনি। কিভাবে খাদ্য ও বাসস্থানের অর্থ যোগান করতে যেয়ে তাদের সম্ভাবনা, স্বাস্থ্য, শখ বিসর্জন দিচ্ছেচোখে পড়েনি। লাল ফিতার দৌরাত্মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিভাবে হেনস্তা হচ্ছেন দিনের পর দিন, তাদের সেটাও চোখে পড়েনি। চোখে পড়েছে বোতল কান্ড। এটা মহা অন্যায়। তাদের চোখে পড়েনি লাঠি আর টিয়ার গ্যাস খেয়ে পেট ভড়ানো ছেলে-মেয়েগুলোর সাথে উপদেষ্টা কেমন ‘হয়তো উষ্কানি’ ব্যবহার করে প্রহসন করলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘জবি শিক্ষার্থীদের এই লংমার্চ ছিলো আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে, তাদের সঙ্গে দেড়যুগ ধরে চলতে থাকা বৈষম্যের বিরুদ্ধে। আর আমাদের মহান উপদেষ্টা দেখালেন কিভাবে বোতল দিয়ে আমলাতন্ত্রের নৈরাজ্যকে ঢেকে দেওয়া যায়, ‘হয়তো’ বলে পুলিশের হামলাকে ঢেকে দেওয়া যায়। আমরা দেখলাম।’

তার উপর হামলার ঘটনার বর্ণনা করে লেখেন, ‘আমি এখনও বাম কাতে ঘুমানোর চেষ্টা করছি। এক পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া কঠিন আমার জন্য। দুপুরে যেটা ঘটেছে, এখনও কোনো হিসাব মিলছে না। কথা ছিলো পুলিশ বন্ধু হবে হলো না, আবারও নাগরিকদের সঙ্গে বেইমানি করলো। আমার শিক্ষক নঈম স্যারের সঙ্গে প্রথম বর্ষ থেকেই ভালো বোঝাপড়া। ভদ্র ও সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। ওনার বিভাগের শিক্ষার্থীরাও একই কথা বলে। সেই মানুষটাকে যখন এতোগুলো পুলিশ ঘিরে সম্মানহানি করছিলো। আমার পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব ছিলো না। আমি চিৎকার করেছিলাম, ‘আমার স্যার উনি’। পুলিশদের ওই জটলার মধ্যে ঢুকে আমি স্যারকে জড়িয়ে ধরি, যেনো তাকে আর সম্মানহানি না করা হয়। আমার গলায় তখনও প্রেসকার্ড ছিলো। স্যার ও আমি ওনাদের বোঝাতে চাচ্ছিলাম উনি শিক্ষক।এরপরই পিছন থেকে আমার ঘাড়ে লাঠি দিয়ে দুইটা আঘাত করা হলো। পিছনে ফিরে বললাম, ‘প্রেসকার্ড দেখেও কেনো আঘাত করলেন?’ উনাদের কোন উত্তর ছিলো না, উনাদের চোখের ভাষা বলছিলো, কেনো মেরেছেন নিজেরাও জানেন না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *