Shopping cart

  • Home
  • শিক্ষাঙ্গন
  • জবি*তে উদ্‌যাপিত হলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি 

জবি*তে উদ্‌যাপিত হলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি 

আগস্ট ৫, ২০২৫

জবি*তে উদ্‌যাপিত হলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি ।

জবি*তে উদ্‌যাপিত হলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি ।

জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্‌যাপিত হয়েছে “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪”-এর প্রথম বর্ষপূর্তি।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট ২০২৫) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল স্থির চিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ এবং দোয়া ও শোকরানা মাহফিল।

সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সাজিদ একাডেমিক ভবনের নিচতলায় স্থির চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি। প্রদর্শনীতে জুলাই অভ্যুত্থানের সময়কার গুরুত্বপূর্ণ ছবি, জবি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার দৃশ্য, আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের ছবি এবং তৎকালীন সংবাদ প্রতিবেদন স্থান পায়।

সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবনের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। শহীদ ইকরামুল হক সাজিদের মা মোছাঃ নাজমা খাতুন লিপি আনুষ্ঠানিকভাবে সভার উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং শহীদ সাজিদের পিতার সুস্থতা কামনায় সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। সেইসাথে তিনি সন্তান হারানোর বিচারও দাবি করেন।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলন কোনো হঠাৎ ঘটে যাওয়া তাৎক্ষণিক ঘটনা ছিল না; বরং এটি দীর্ঘদিনের নানা প্রকার বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিরোধের ফল। এই আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গৌরবজনক, শহীদ ইকরামুল হক সাজিদের আত্মত্যাগ এবং অসংখ্য শিক্ষার্থীর সাহসিকতা আমাদের চিরকাল অনুপ্রেরণা জোগাবে।

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা ও স্থবিরতা কাটিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কারের যে দরকার ছিল, জুলাই অভ্যুত্থান সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এখন আমাদের দায়িত্ব—এই বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞান ও গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। স্বৈরাচারমুক্ত, বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এগিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জুলাই বিপ্লব বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্‌দীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ মোশাররাফ হোসেন।

অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্‌দীন তার বক্তব্যে বলেন, সেদিনের প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ছিল চরমভাবে বিঘ্নিত। দেশে ছিল না বাকস্বাধীনতা, শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে কার্টুনিস্ট, ফটোসাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষদের উপর ফ্যাসিবাদী সরকারের অব্যাহত নিপীড়ন ছিল নিত্যদিনের বাস্তবতা। সেই দমননীতির ছায়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেও পড়েছিল। এখানে যাঁরা সেই ফ্যাসিস্ট শক্তির সহযোগী হিসেবে নির্যাতন ও দমন-পীড়নে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত বিচারের আওতায় আনতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান ছিল একাধিক ঘটনার সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া, যা অবশেষে একটি সফল গণআন্দোলনে পরিণত হয়। এই আন্দোলনের পেছনে কাদের অবদান কতটুকু—তা নির্ধারণের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এটি একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের ফসল। ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বৈষম্যমূলক নীতিই এই অভ্যুত্থানের প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। তারা যদি বৈষম্য ও নিপীড়নের পথ বেছে না নিত, তাহলে এমন একটি বিপ্লবের প্রয়োজন হতো না।

অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণ পর্বে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজিত প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আইরিন জাহান (২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ), দ্বিতীয় স্থান পান সমাজকর্ম বিভাগের হুমায়রা সাদাফ (২০২১-২২) এবং তৃতীয় হন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শামসুন নাহার দিসা (২০২৩-২৪)।

১৭তম আন্তঃবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় গণিত বিভাগ এবং রানারআপ হয় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগ। শ্রেষ্ঠ বিতার্কিক নির্বাচিত হন গণিত বিভাগের মুনিব মুসান্না। এছাড়া জেএনইউডিএস ডিবেট প্রিমিয়ার লীগ ২০২৫-এ চ্যাম্পিয়ন হয় ডিএইচপি সেভেনটি ওয়ান দল এবং রানারআপ হয় রিথোরিক রাইন দল। শ্রেষ্ঠ বিতার্কিক হন মাইনুল ইসলাম অমি।

জুলাই আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীর ওপর সংঘটিত হামলার প্রতিবাদ এবং তাঁদের উত্থাপিত দাবিসমূহের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ জন শিক্ষক, যাঁরা মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেছিলেন, অনুষ্ঠানে তাঁদের সকলের পরিচয় সামনে তুলে ধরা হয়। তাঁদের এই সাহসী ভূমিকার প্রতি সম্মান জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোঃ শেখ গিয়াস উদ্দিন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, প্রক্টর, প্রভোস্ট, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালকবৃন্দ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আয়োজিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া ও শোকরানা মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *