স্টাফ রিপোর্টার ঢাকা: এত অটোরিকশা এলো কোথা থেকে? ঢাকার বসিলার একটি দোকান ‘নোমান অটো’। বাইরে থেকে দেখে মনে হতে পারে এটি কেবল ব্যাটারিচালিত রিকশা বিক্রির স্থান। তবে ভেতরে ঢুকলেই বোঝা যায়, এটি একটি ওয়ার্কশপও—যেখানে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন অটোরিকশা।
দোকানের মালিক তৈয়ব হোসেন জানালেন, একটি রিকশা বানাতে ৭০ থেকে ৭২ হাজার টাকা খরচ হয় এবং তা ৫-৬ হাজার টাকা লাভে বিক্রি করা হয়। তিনি বলেন, রিকশা তৈরির মোটর, ব্যাটারি, হর্ন, ব্রেকসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চীন থেকে আমদানি করা হয় এবং দেশের বাজার থেকেই কাঠামো, চাকা, আসন ইত্যাদি কিনে এনে ফিটিং করে রিকশা তৈরি করা হয়।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায়—মোহাম্মদপুর, কেরানীগঞ্জ, পুরান ঢাকা, মুগদা, যাত্রাবাড়ী, মিরপুরসহ নানা পাড়া-মহল্লায় এ ধরনের অসংখ্য ছোট-বড় ওয়ার্কশপ গড়ে উঠেছে। এসব ওয়ার্কশপ থেকে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে শত শত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।
সাধারণ রিকশার চেয়ে পরিশ্রম কম, আয় বেশি—এ কারণে এই অটোচালিত যান দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে শুধু রিকশাচালকরাই নন, অন্য পেশার মানুষও অটো চালনায় যুক্ত হয়েছেন।
বিভিন্ন রকমের রিকশা তৈরি হচ্ছে ওয়ার্কশপগুলোতে—কখনো চিকন চাকা, কখনো মোটা; কোনোটি পুরোপুরি নতুন কাঠামোর, আবার কোনোটি পুরনো রিকশা মোডিফাই করে বানানো। এভাবে ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন ঢাকায় আসছে অগণিত অটোরিকশা।
নিয়ন্ত্রণহীন উৎপাদন, চোখে পড়ছে বিশৃঙ্খলা।
বাংলাদেশে এই ধরনের ব্যাটারিচালিত রিকশা আইনত অবৈধ। তবু, স্থানীয় রাস্তা পেরিয়ে এসব অটোরিকশা এখন মূল সড়ক এবং ফ্লাইওভারেও চলতে শুরু করেছে। ফলে যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে।
সরকার কয়েকবার এসব যান বন্ধ করার উদ্যোগ নিলেও চালকদের আন্দোলনের মুখে তা ব্যর্থ হয়। পুলিশ বা প্রশাসন মাঝে মাঝে সড়কে অভিযান চালালেও উৎপাদন কেন্দ্র বা ওয়ার্কশপগুলোর ওপর কোনো নজরদারি নেই।
একজন চালক, খালেক মন্ডল বলেন, “ঋণ নিয়ে আমি অটো কিনেছি। হঠাৎ করে বন্ধ করলে আমরা কোথায় যাবো? আগে সরকার উৎপাদন বন্ধ করুক, তারপর রাস্তায় নামা বন্ধ হোক।”
বৈধতা নাকি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ?
সরকার বর্তমানে এসব রিকশাকে মূল সড়ক থেকে সরিয়ে পাড়া-মহল্লা সীমাবদ্ধ রাখার পরিকল্পনা করছে। তবে সেগুলো কার্যকর হচ্ছে না। যানজট শুধু ঢাকায় নয়, মফস্বল শহরগুলোতেও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, আপাতত অটোরিকশা নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না। বরং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নতুনভাবে এসব বাহনকে শ্রেণিবিন্যাস করে নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনা করছে। ভবিষ্যতে লাইসেন্স ব্যবস্থাও চালু হতে পারে।
বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ মনে করেন, উপযুক্ত নীতিমালা ছাড়া এই বিশৃঙ্খলা থামানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “একটি শহরে কতগুলো অটোরিকশা চলবে, কী ধরনের হবে, গতি কত থাকবে—এসব নির্ধারণ করা জরুরি। ওয়ার্কশপগুলোতেও নিয়ম-কানুন ও নজরদারি আনতে হবে।”
তার মতে, অটোরিকশা একটি কার্যকর ও নিরাপদ যান হতে পারে—শুধুমাত্র সঠিক পরিকল্পনা, নিয়ন্ত্রণ এবং বাস্তবমুখী নীতিমালা থাকলে।