বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে সাতক্ষীরা জেলা। আর এই জেলার অবহেলিত, পিছিয়ে পড়া জনপদের ছোট্ট গ্রাম বেনাদনা, কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন, কালিগজ্ঞ উপজেলা। ১৯৬৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তাঁর মাতুলালয় পানিয়া,কালীগঞ্জ, সাতক্ষীরাতে জন্ম গ্রহণ করেন। তৎকালিন সময়ের স্বল্প বেতনের স্কুল শিক্ষকের অনটন যুক্ত পরিবার, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে বাবার কার্যক্রম, দেশের এক সংকট মুহুর্ত আগত, ঠিক সেই সময়ে গ্রামীন কাদা
মাটির মাঝে বেড়ে উঠতে থাকেন তিনি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের দামামার মধ্যে ছোট্ট শিশুর অবুঝ মনে সৃষ্টি হয় দেশত্ববোধ, দেশের প্রতি মমতাবোধ। মৌতলা ইউনিয়ন এর পানিয়া গ্রাম নানা বাড়ী কাছা-কাছি ইউনিয়ন আর
সেখানে থেকেই তাঁর শিশু কালের বড় অধ্যায় শুরু। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সাথে তার বন্ধন, দুরন্ত ছোটবেলা, তার মানুষ প্রেমি হওয়ার খোরাক তৈরি করে। স্কুল জীবন, কলেজ জীবন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন তাকে সব সময় তাড়িত করেছে গ্রামের দিকে, মানুষের সাথে মানুষের বন্ধনের দিকে, সমাজ পরিবর্তন এর দিকে কখনও রবীন্দ্রনাথ কখনও মহত্মা গান্ধি জীবনের কল্পনায় তারা বাস করেছে। একজন শিক্ষক পরিবারের ছেলে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে প্রচুর টাকা উপার্জন করবে, সরকারি চাকরী করবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু না, ছোটবেলার সেই দেখা, উপলব্ধি বারবার তাকে তাড়িত করে গ্রামের দিকে। তাই শিক্ষা জীবন শেষ করে গ্রামে।
ফিরে দেখলেন ছোট বেলায় যা দেখেছি তার পরিবর্তন আজও হয়নি। মানুষের অভাবের, মানুষের স্বাভাবের, পরিবেশের সংস্কৃতির পরিবর্তন করতেই হবে। ১৯৯১ সালে মাত্র ২০,০০০ টাকা নিয়ে ছোট্ট একটি ঠিকানায়
মোস্তফা নুরুজ্জামান কয়েকজনকে সাথে নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন সুশীলন এর।
উপকুলবন্ধু মোস্তফা নুরুজ্জামান উপলব্ধি করলেন মানুষের মধ্যে আছে অসীম সম্ভাবনা আর এই সম্ভনার বিকাশ ঘটাতে হবে, মানুষের কল্যানে মানুষকে কাজে লাগাতে হবে, একটি সার্বজনীন চেতনাবোধ তৈরি করতে হবে।
তিনি চিন্তা করেছেন আমার প্রিয় উপকূল জলবায়ু পরিবর্তনের রোষানলে পানির তলায় নিমজ্জিত হবে, কোটি কোটি মানুষ সর্বস্য হারাবে “এটা মনুষ হিসেবে মেনে নিতে পারবেন না” বলেই উপকূলের মানুষের জন্য যৌবনের উত্তাপ দিয়ে তিনি তৈরি করলেন সুশীলন।
উপকুলের মানুষের জন্য এ পর্যন্ত ৪৩৯ টি ছোট বড় প্রকল্প তিনি বাস্তবায়ন করেছেন, ১৫২ টি সংস্থার মাধ্যমে এর মধ্যে ইউএন, আন্তর্জাতিক, জাতীয় সংস্থা, সরকারি সহায়তার মাধ্যমে। সারা দেশে ৫১ টি অফিস স্থাপন করেছেন।
২০০০ সালের বন্যায় সাতক্ষীরা জেলার অবহেলিত ২০,০০০ পরিবারকে ত্রান সহায়তা দিয়েছেন। সিডরে সাতক্ষীরা, খুলনা, বরগুনা, ভোলা অঞ্চলের ১,৫০,০০০ পরিবারকে ত্রান ও পুর্ণবাসনের ব্যবস্থা করেছেন, ২০০৮।



