Shopping cart

নির্বাচনী প্রচারণায় মুখর জবি ক্যাম্পাস

ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫

নির্বাচনী প্রচারণায় মুখর জবি ক্যাম্পাস।

নির্বাচনী প্রচারণায় মুখর জবি ক্যাম্পাস।

জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫ কে সামনে রেখে প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাস। নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন রয়েছে উদ্দীপনা, উন্মাদনা তেমনি প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে নানা পরিকল্পনা।

জগন্নাথ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের পর প্রথমবারের মতো হতে যাওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ক্যাম্পাস আড্ডায় যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্র। আলোচনা, সমালোচনা সবকিছুর মধ্যেই সংযোজিত নতুন বিষয় জকসু নির্বাচন। আর এই আলোচনা সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ, চত্বর, শহীদমিনার এলাকায় চলছে লিফলেট বিতরণ, পোস্টারিং এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় সভা। ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান ফটক, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, বিজ্ঞান ভবন, কলা ভবন, শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ, শহীদ সাজিদ ভবন এলাকা এখন প্রার্থীদের পদচারণায় মুখরিত। শিক্ষার্থীদের কাছে নিজেদের প্রতিশ্রুতি ও পরিকল্পনা তুলে ধরতে পথসভায় বক্তব্য রাখছেন প্রার্থীরা।

দীর্ঘদিন পর জকসু নির্বাচনের দামামা বাজতেই প্রার্থীরা গোছাতে শুরু করেছে নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহার। যেখানে আবাসন সংকট থেকে শুরু করে পরিবহন, সেশনজট নিরসন, গবেষণা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম জোরদার, ক্যাম্পাস নিরাপত্তা, নারী শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি সহ বেশ কয়েকটি বিষয়কে প্রাধান্য দিতে দেখা যায় তাদের।

তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতে , প্রতিশ্রুতি নয় বরং বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনাই তারা চান। অবাস্তব কোন ইশতেহার দেওয়া নেহাত লোক দেখানো ছাড়া কিছুই নয়। তবে আশা না দেখিয়ে জকসু নেতারা বাস্তবে কাজ করবে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ।

আচরণবিধি মেনে শান্তিপূর্ণ প্রচারণার আহ্বান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের। নির্ধারিত সময় ও স্থানে প্রচারণা চালানো, পোস্টারিংয়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সব ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন কোনভাবেই কাম্য নয় বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

নির্বাচনী প্রচারণা ও শিক্ষার্থীদের সাড়া বিষয়ে জানতে চাইলে ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান ( ছাত্রদল সমর্থিত) প্যানেল থেকে ভিপি পদপ্রার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, প্রথম নির্বাচন, সেই হিসাবে ভিষণ সুশৃঙ্খল এবং আনন্দমুখর পরিবেশ বিরজমান, যেমনটা সবসময় জবিয়ানরা থাকে। আমরা আশাবাদী আন্দোলন-সংগ্রামের পরিচিত মুখগুলো সামনে আনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা ভুল করবে না।

অন্যদিকে অদম্য জবিয়ান ঐক্য (ছাত্রশিবির সমর্থিত) প্যানেল থেকে জিএস পদপ্রার্থী আব্দুল আলিম আরিফ জানান, আলহামদুলিল্লাহ, ক্যাম্পাসের পরিবেশ প্রচারণার জন্য ভালো। আমাদের হল নেই এটা একটা অসুবিধা। তবে ক্যাম্পাস ছোট হওয়াটাও প্রচারণার জন্য একটা সুবিধা। সবার সঙ্গে ক্যাম্পাসেই দেখা হয়ে যায় আল্লাহর রহমতে।

শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে খুবই ভালোভাবে গ্রহণ করছেন। তারা আমাদেরকে খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করছেন। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের একটা বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করে নিতে পেরেছে ছাত্রশিবির। তারা ছাত্রশিবিরকে খুবই ভালভাবে ভালোভাবে গ্রহন করছেন। আশা করি আমাদের ছাত্রী বোনেরা আমাদের পাশে থাকবে।

জকসু শুধু একটি নির্বাচন নয় বরং শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যম উল্লেখ করে ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান প্যানেল থেকে জিএস পদপ্রার্থী ফয়সাল মুরাদ বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে বড় প্যানেলগুলোর আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয় বাদ দিলে মোটামুটি আনন্দঘণ পরিবেশ তৈরি হয়েছে ক্যাম্পাসে। আর যেহেতু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শুরু থেকেই কাজ করেছি সুতরাং শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন পাব বলে আশাবাদী এখন পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি।

এদিকে স্বতঃস্ফূর্ত প্রচরণা ও ইকুয়ালাইজেশন না থাকলে জকসু নির্বাচন প্রোপার ইউটিলাইজ হবে না মনে করে স্বতন্ত্র জিএস পদপ্রার্থী উম্মে মাবুদা বলেন, ক্যাম্পাসে প্রচারণার তেমন ফ্রুটফুল সিচুয়েশন আমি দেখি না। কোনো ন্যাশনাল মিডিয়া নাই। ব্যালট নং দেয় নির্বাচনের ১২ দিন আগে৷ ব্যালট নং দেওয়ার পরের ২ দিন শুক্র-শনি। নির্বাচনের আগে ২ দিন তফসিল অনুযায়ী বন্ধ। আবার ২৫ তারিখ ক্রিস্টমাস। টোটাল সময় পাওয়া যায় ৪ দিন৷ মানে এটা কি প্রহসন না? কিন্তু প্রচারণা শুরু হওয়ার কথা ছিলো ১৫ তারিখ। ব্যালট নং দিসে ১৮ তারিখ। যাইহোক, এখানে পলিটিকাল মারপ্যাঁচ চলতেসে এতটুকু বুঝতেসি। আমরা সাধারণরা সবসময় সাধারণই থেকে যাই। মাথার উপর কারা যেন তাল ভেঙে খায়।

তিনি আরও বলেন, স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করে, মিডিয়া ফোকাস কম পাওয়া সত্ত্বেও সাড়া বেশ ভালো পাচ্ছি। মানুষের জন্য ৪টা বছর ভলান্টারিজম করে গেছি৷ প্রতি মাসে ৩০/৪০/৫০ ব্যাগ করে ব্লাড ম্যানেজ করেছি। কখনও জকসু হবে ভেবে করি নাই। ২টা সংগঠনে নেতৃত্ব দিসি। এখন আসলে বাকিটা ভোটারদের ইভ্যালুয়েশন। সর্বোপরি, যোগ্য ব্যক্তি হারালে, কাঁদতে হবে আড়ালে।

প্রার্থীদের শান্তিপূর্ণ প্রচারণা ও আচরণে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, প্রথমবার হিসাবে প্রার্থী, প্যানেল এবং ভোটার সবাই সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে, ছোট ছোট যা দুই একটি ঘটনা ঘটেছে তা পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে হয়েছে৷ তবে সবমিলিয়ে সকলের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রশংসনী।

সব মিলিয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। নির্বাচনী প্রচারণার এই উত্তাপ শেষ পর্যন্ত ব্যালটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাবে—সেই অপেক্ষায় পুরো জবি ক্যাম্পাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *