Shopping cart

রংপুরে দুই সন্তানের জননীকে বিষপ্রয়োগে হত্যা

ডিসেম্বর ৭, ২০২৫

রংপুরে দুই সন্তানের জননীকে বিষপ্রয়োগে হত্যা।

রংপুরে দুই সন্তানের জননীকে বিষপ্রয়োগে হত্যা।


রিয়াজুল হক সাগর, রংপুর: রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ভাংনি ইউনিয়নের দলশিংপুর এলাকায় দুই সন্তানের জননী আরজিনা বেগম (৩০)–কে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন মিলে মারধর ও মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করেছে—এমন অভিযোগ উঠেছে।

গত ৩ ডিসেম্বর, বুধবার সন্ধ্যায় এ হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভিকটিমের বড় ভাই এরশাদ হোসেন চারজনকে আসামি করে মিঠাপুকুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

এজাহার ও নিহতের পরিবারের বরাতে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর আগে কাউনিয়া উপজেলার সদরা তালুক বাহেরহাট এলাকার আজিজুল ইসলামের মেয়ে আরজিনা বেগমের সঙ্গে মিঠাপুকুর উপজেলার দলশিংপুর এলাকার বুলু মিয়ার ছেলে শাহাদত হোসেনের বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে ৮ বছর বয়সী একটি ছেলে ও মাত্র ৭৫ দিনের আরেকটি সন্তান রয়েছে।

পরিবারের অভিযোগ, গত ছয় মাস ধরে স্বামী শাহাদত হোসেন বিভিন্ন অজুহাতে আরজিনার বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা আনতে চাপ দিতেন। একাধিকবার টাকা দেওয়া সত্ত্বেও তিনি স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। আরজিনার ছোট ভাই রিপন ইসলাম বলেন, “বোন আমার অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থাতেও শ্বশুরবাড়ির লোকজন অহেতুক মারধর করত। সেই নির্যাতনের কারণেই সে এক পর্যায়ে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।”

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরজিনা দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেন। এরপর সন্তানকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে দেখেন—স্বামী শাহাদত হোসেন ময়মনসিংহ জেলার আখি মনি নামে এক যুবতীকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে ঘরে তুলেছেন। অতঃপর সংসারে প্রায়ই দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেখা দেয়।

পরিবারের দাবি, ঘটনার দিন বিকেলে শাহাদত, তার দ্বিতীয় স্ত্রী আখি মনি ও শ্বশুর-শাশুড়ি মিলে আরজিনাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এক পর্যায়ে শাহাদত ও আখি মনি ঘরে থাকা কীটনাশকের বোতল এনে জোরপূর্বক আরজিনার মুখে ঢেলে দেয়। এতে আরজিনা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে নাটকীয়ভাবে তাকে মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও ব্যর্থ হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে পৌঁছানোর পরই চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অভিযোগ করা হয়, হাসপাতালে লাশ রেখে পালিয়ে যায় স্বামী ও তার সহযোগীরা এবং ফোনে পরিবারকে জানায় যে আরজিনা অসুস্থ।

পরদিন ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আরজিনার বড় ভাই, ছোট ভাই এবং ফুফুসহ পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে পৌঁছে বেডে তার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন—পাশে কেউ নেই।

মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, “ঘটনার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। তদন্তে হত্যার আলামত পাওয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

ময়নাতদন্ত শেষে ৫ ডিসেম্বর, শুক্রবার বাদ জুমা নিহত আরজিনার দাফন সম্পন্ন হয়। তার মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে নেমে আসে গভীর শোক। মাত্র আড়াই মাসের নবজাতককে নিয়ে পরিবারের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

ভিকটিমের বড় ভাই এরশাদ হোসেন, ছোট ভাই রিপন ও ফুফু লাইলি বেগম জানান, আরজিনা অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রিধারী শিক্ষিত নারী। তিনি দুই সন্তান, বিশেষ করে মাত্র ৭৫ দিনের নবজাতককে ফেলে আত্মহত্যা করতে পারেন না। তারা দাবি করেন—আরজিনাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারা শাহাদত হোসেন ও তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *