সুনামগঞ্জ জেলা, সংবাদদাতা: সুনামগঞ্জের ছাতক-দোয়ারাবাজার দুই উপজেলার মধ্যবর্তী মানিকপুর গ্রামকে ‘লিচুর গ্রাম’ বলেই চেনেন সবাই।
বিভিন্ন উপজেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এ গ্রামে লিচু কিনতে আসেন। প্রতি বছর কোটি টাকার বেশি লিচু বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লিচু পাঠানো হয়।মানিকপুর গ্রামের রসালো লিচু বাজারে আসতে শুরু করেছে। মানিকপুর, কচুদাইড়, বড়গল্লা, চানপুর, উলুরগাঁও, গোদাবাড়ী গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার লিচু উৎপাদন করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে।
গত বছর কয়েক দফা শিলাবৃষ্টির কারণে ক্ষতি হয়েছিল লিচু ব্যবসায়ীদের। এ বছর তীব্র তাপদাহে লিচু পুড়ে গেছে। তবুও কোটি টাকার লিচু ব্যবসার স্বপ্ন দেখছেন বাগান মালিকেরা।
ছাতক উপজেলা (শহর) থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে ও দোয়ারাবাজার উপজেলা সদর হতেও প্রায় ৩ কিলোমিটার দক্ষিনপূর্ব দিকে নোয়ারাই ইউনিয়নের চৌমুহনীবাজার।
বাজারের একটু উত্তরপশ্চিমের রাস্তা দরে সামনে এগোলেই চোখে পড়বে মানিকপুর গ্রামের লিচুবাগানগুলো। এ গ্রামে প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায় থাকা গাছে গাছে পাকা লিচুর রঙিন ঝলকানি। মন কেড়ে নেয় লিচু প্রেমিদের।
প্রতিকূল অবস্থা, কঠিন যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যেও কঠোর পরিশ্রম করে এখানের লোকজন তাদের উৎপাদিত লিচু বাজারজাত করে আসছে।
জানা যায়,সুনামগঞ্জ জেলাসহ সিলেট বিভাগের প্রতিটা হাটবাজারের চাহিদাসম্পন্ন সুস্বাদু এই লিচুর গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় লিচু চাষিদের। এই অঞ্চলের লিচুর বিশেষ চাহিদা থাকলেও চলাচলের রাস্তা কাঁচা থাকায় লিচুর মৌসুমে রাস্তাগুলোতে পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে৷ এতে বাহিরের ক্রেতারা আসতে না পারায় কম দামেই লিচু বিক্রি করতে হয় এখানকার লিচু মালিকদের।
মঙ্গলবার (১৩ মে) সরেজমিনে জানা যায়, লিচু সংগ্রহের উৎসব চলছে এই গ্রামে। অনেক শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। বিশেষ করে তরুণ ও নারীরা এখানে কাজ করছেন। শিক্ষিত তরুন বেকার যুবকরাও উদ্যোগ নিয়েছেন লিচু ক্রয়করে বাহিরের এলাকায় বিক্রি করার। তাই ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত দম ফেলার যেন সুযোগ নেই কারো।
দেখা যায় বাগানের গাছে গাছে ঝুলছে পাকা লিচু। উৎপাদিত এসব লিচু দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ ও বিক্রির জন্য এখন ব্যস্ত এখানকার লিচুচাষিরা। লিচু উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত মানিকপুর গ্রামের আব্দুল হামিদ বাঙালি ডা. কাওসার,ডাঃ হাফিজ বিলাল হোসাইন, শওকত আলী,মানিক মিয়া,আরব আলী বলেন, ‘লিচুর ফলন কম হলেও এ মৌসুমে লিচুর দাম ভালো আছে। বাগানে ১০০ টি লিচু ৩০০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। গ্রামের সকলের বাড়িতে আছে ২/৪ টি লিচুর গাছ। প্রায় ২০/২২ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে গ্রামে লিচুর চাষ শুরু করা হয়। লিচু চাষ লাভজনক হওয়ায় অনেকেই লিচু চাষে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। সেজন্য এ অঞ্চলে লিচু চাষের অনেক বিস্তৃতি ঘটেছে। এ অঞ্চলের কয়েকটি গ্রামে এখন বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ হয়।লিচু আকারে ছোট হলেও সুস্বাদু। সিলেট ও সুনামগঞ্জে এর চাহিদা ব্যাপক। ছাতক—দোয়ারাবাজার উপজেলার বিভিন্ন হাট ও সুনামগঞ্জ শহরে এখানকার লিচু বিক্রি হয়। সিলেট শহরে বর্তমানে এ অঞ্চলের লিচুর চাহিদা রয়েছে এবং সেখানেও মানিকপুর এলাকার লিচু বিক্রয় হচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে ছাতক—দোয়ারাবাজারের বিভিন্ন হাটে এ অঞ্চলের উৎপাদিত লিচুর বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতিদিন চৌমুহনী বাজারে বিক্রি হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার লিচু। চৌমুহনী বাজার এখানকার লিচুর হাট। স্থানীয় এ বাজারে সকাল ৬ টায় লিচুর হাট বসে, চলে ৮ টা পর্যন্ত। দূর—দূরান্তের ব্যবসায়ীরা সকালে চৌমুহনী বাজার থেকে পাইকারিভাবে লিচু কিনে নিয়ে অন্যান্য বাজারে ব্যবসা করেন। চলতি মৌসুমে ১০০ বড় আকারের লিচু ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং আকার কিছুটা ছোট হলে ১০০ লিচু ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
লিচু মালিকরা জানান,মানিকপুর এলাকায় চলাচলের রাস্তা অত্যান্তই খারাপ। শুঁকনো মৌসুমে কোনভাবে চলাফেরা করা গেলেও এলাকার রাস্তাগুলো কাঁচা থাকায় বর্ষায় বর্তমানে লিচুর মৌসুমে এলাকার সড়কগুলোতে পানি জমে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকে। এতে বাহিরের পাইকাররা লিচুর গ্রামে ডুকতে না পারায় কম দামে লিচু বিক্রি করতে হচ্ছে। নিজেরাই বাজারে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে বাগানের লিচু। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে বাহিরের অঞ্চলের পাইকাররা লিচুর বাগানে এসে লিচু কিনতে পারবেন এবং এতে প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার লিচু বিক্রি করা সম্ভব হবে বলেও তারা জানান।
ছাতক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খাঁন জানান, কৃষি বিভাগ থেকে লিচু চাষীদের সবসময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অনেককে লিচু চাষে উদ্যোগী করা হয়েছে। টিলা বেষ্টিত এ অঞ্চল লিচু চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানে লিচুর বাগান করতে আগ্রহীদের সরকারি সব সহযোগিতা দেওয়া হবে।