কুবি প্রতিনিধি: অবৈধ উপায়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক আবু ওবায়দা রাহিদকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কারাদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় তিনি ক্যাম্পাসে প্রবেশসহ সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন।
রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৭তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন সিন্ডিকেট সদস্য।
খোজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি আবু ওবায়দা রাহিদ মার্কেটিং বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান। তবে নিয়োগের সময় তিনি নির্ধারিত যোগ্যতার শর্ত পূরণ না করলেও তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মঈনের সময় তাকে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ন্যূনতম জিপিএ ৩.৭০ থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু রাহিদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফলাফল ছিল যথাক্রমে ৩.৫৬ এবং ৩.৫৪, যা নির্ধারিত মানদণ্ডের নিচে।
অভিযোগ রয়েছে, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তৎকালীন উপাচার্য অননুমোদিতভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে একটি নতুন শর্ত সংযোজন করেন। সেখানে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকলে ফলাফলের যোগ্যতায় শিথিলতার সুযোগ রাখা হয়, যা সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিধিমালায় অনুমোদিত ছিল না।
এছাড়াও, যোগদানের সময় রাহিদ কুমিল্লার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ে প্রায় ছয় বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার সনদ জমা দেন, যা পরে ভুয়া বলে অভিযোগ ওঠে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই বিশ্ববিদ্যালয় তার ছয় বছরের চাকরি সংক্রান্ত নিয়োগপত্র, সার্ভিস বুক বা সংশ্লিষ্ট কোনো বৈধ নথি দেখাতে পারেনি। তিনি সেখানে অল্প সময়ের জন্য চুক্তিভিত্তিক ক্লাস নিয়েছিলেন মাত্র। এ ক্ষেত্রে সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর সুপারিশ ব্যবহার করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। এই ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদের ভিত্তিতে তিনি প্রায় তিন বছর ধরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছিলেন।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, আবু ওবায়দা রাহিদ ৪০তম বিসিএস প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। মামলার এজহার ও চার্জশিট সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩ মে অনুষ্ঠিত ৪০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষাকালে ঢাকা কলেজ কেন্দ্র থেকে ডিবি পুলিশ তাকে ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ হাতেনাতে আটক করে। ওই মামলায় প্রশ্নফাঁসে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ উল্লেখ থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের তদবিরে পরবর্তীতে তিনি মামলা থেকে অব্যাহতি পান বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় তিনি দশ দিনের রিমান্ডেও ছিলেন।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, “ওনাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা এখনই কিছু বলতে পারছি না। সবকিছু লিখিত আকারে এলে তখনই মন্তব্য করা সম্ভব হবে।” তথ্য–প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কেন সাময়িক বহিষ্কার করা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে আমরা ২০১৮ সালের আইন অনুযায়ী প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই প্রতিবেদন পাওয়ার পর ২০১৮ সালের আইন অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”



