আবু তাহের, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ছাতক দোয়ারা ৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মুফতি আলী আকবর সিদ্দিকীর নেতৃত্বে সোমবার (৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হয়েছে এক বর্ণাঢ্য মোটরসাইকেল শোডাউন। শতাধিক মোটরসাইকেল ও বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ শোডাউনকে ঘিরে দোয়ারাবাজার থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ।
দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা পতাকা ও ব্যানার হাতে বিশাল মোটরসাইকেল বহর নিয়ে সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। যাত্রার শুরু থেকেই “পীর সাহেব চরমোনাই জিন্দাবাদ” ও “ইসলামী শাসন চাই” স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা।
শোডাউনের নেতৃত্ব দেন ইসলামী আন্দোলন দোয়ারাবাজার উপজেলা সভাপতি মাওলানা মনির হুসাইন, সাধারণ সম্পাদকসহ উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারা। তাদের সঙ্গে দোয়ারাবাজারের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও উচ্ছ্বাসের সঙ্গে অংশ নেন।
গোডাউনের সামনে থেকে সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক–দোয়ারাবাজার) আসনের ইসলামী আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী মুফতি আলী আকবরকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু হয়। কয়েকশত মোটরসাইকেলের দীর্ঘ বহরটি দোয়ারাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়কজুড়ে আকর্ষণীয় দৃশ্যের সৃষ্টি করে। যাত্রাপথজুড়ে স্থানীয় মানুষজনও দাঁড়িয়ে এই শৃঙ্খলাপূর্ণ শোডাউন উপভোগ করেন।
শোডাউনটি শেষ হয় সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে এসে, যেখানে ইসলামী আন্দোলনের জেলা গণসমাবেশের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলটির আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (পীর সাহেব চরমোনাই)। সমাবেশস্থলে পৌঁছে মুফতি আলী আকবর ও দোয়ারাবাজারের নেতাকর্মীরা প্রধান অতিথির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন পীর সাহেব চরমোনাই। তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দুর্নীতি, ভোটাধিকার হরণ এবং নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে ইসলামী আন্দোলনের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন,“দেশে ন্যায়, সুবিচার ও জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হলে ইসলামভিত্তিক শাসনব্যবস্থা ছাড়া বিকল্প নেই। ইসলামী আন্দোলন সেই ব্যবস্থার দাবিদার।”
এরপর বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের প্রার্থী মুফতি আলী আকবর সিদ্দিকী। তিনি বলেন,“সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ফিরিয়ে আনতে হলে জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজনই একমাত্র সমাধান। এটি শুধু ইসলামী আন্দোলনের সনদ নয়, বরং ন্যায়ের ও গণমানুষের অধিকার পুনরুদ্ধারের সনদ।”
তিনি আরও বলেন,“দেশে একের পর এক অন্যায়, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার চলছে। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের লক্ষ্য হলো ইসলামভিত্তিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের মর্যাদা ফিরিয়ে আনা।”
গণসমাবেশে বক্তারা বিচারহীনতা ও দায়মুক্ত রাজনীতি নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন। তারা বলেন, “জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের বিচার কার্যক্রম চলাকালীন অবস্থায় তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। অপরাধীদের বিচার না করে রাজনীতিতে সক্রিয় রাখলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।”
সমাবেশের শেষ পর্যায়ে পীর সাহেব চরমোনাই সুনামগঞ্জ ৫ ছাতক দোয়ারা আসনের প্রার্থী মুফতি আলী আকবরের হাতে ইসলামী আন্দোলনের নির্বাচনী প্রতীক ‘হাতপাখা’ আমানত হিসেবে তুলে দেন এবং তাকে বিজয়ী করতে সকল নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানান।
পরবর্তীতে দোয়ারাবাজারে ফিরে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা যায় নতুন উদ্দীপনা ও আত্মবিশ্বাস। উপজেলা সভাপতি মাওলানা মনির হুসাইন বলেন,>“প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে কাজ করছি। প্রতিটি ইউনিয়নে মানুষের দ্বারে গিয়ে দোয়া ও সমর্থন নিচ্ছি। একসময় যেখানে আমাদের মিছিল-মিটিংয়ে ১০০-২০০ জন থাকত, এখন সেখানে হাজারো মানুষ অংশ নিচ্ছে। এটি আমাদের দাওয়াতি কাজের সফলতা।”
তিনি আরও বলেন,“ইনশাআল্লাহ আগামী দিনে প্রমাণ হবে — ছাতক–দোয়ারাবাজার ইসলামী আন্দোলনের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। জনগণ আমাদের ভালোবাসছে, আমাদের প্রার্থীও একজন ওয়ায়েজ হিসেবে এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।”
স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইসলামী আন্দোলনের এই ধারাবাহিক কর্মসূচি ও শক্তিশালী মাঠ-পর্যায়ের তৎপরতা আসন্ন নির্বাচনে তাদের অবস্থানকে আগের চেয়ে অনেক দৃঢ় করেছে।