স্টাফ রিপোর্টার: বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় মাকে খুন করার পর লাশ রেফ্রিজারেটরে রাখার অভিযোগে ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে আটক করেছে র্যাব। তবে পুলিশ জানিয়েছে, খুনি ছেলে নয়, বাড়ির ভাড়াটিয়া।
শনিবার (১৬ নভেম্বর ২০২৪) সাদের বাবা, উম্মে সালমার স্বামী আজিজুর রহমান র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন টর্চার করে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য যে সাদক তার মাকে হত্যা করেছে। তিনি দুপচাঁচিয়া দারুসুন্নাহ কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ও উপজেলা জামে মসজিদের খতিব।
আজিজুর রহমান বলেন, ১১ নভেম্বর জানাজা শেষে র্যাব তাকে ও তার ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এরপর সাদকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। তিনি তখন পাশের ঘরে বসে ছিলেন। এই সময়ে সাদকে অনেক টর্চার করা হয়। মনে হচ্ছে এ কারণেই সাদ তার মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তিনি আরো বলেন, স্ত্রীকে হারানোর পরের দিনই মাকে হত্যার অভিযোগে তার ছোট ছেলেকে আটক করা হয়। একদিনের মধ্যেই এমন কিছু নিয়ে তার নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়ে গেল। বিশ্বাস হচ্ছে না তার শান্ত ছেলে তার মাকে হত্যা করবে? তার স্ত্রী (সালমা) হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে বলে তিনি বারবার আশা করছেন।
সাদের বাবা বলেন, ‘আমি চাহিদা অনুযায়ী র্যাব ও পুলিশকে তথ্য দিয়েছি। ভাড়াটিয়া মাবিয়া সুলতানার বিষয়ে দুই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একাধিকবার অবহিত করেছি। কিন্তু র্যাব মাবিয়ার বিষয়টি আমলে নেয়নি।
তিনি জানান, মাবিয়া নামের ওই নারী চার মাস আগে বাসাটি ভাড়া নেন। মাবিয়ার আচরণ শুরু থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। তার স্ত্রী গত সপ্তাহে বলেছিলেন যে তাকে (মাবিয়া) রাখা যাবে না এবং তারপর তিনি মাবিয়াকে বাড়ি ছেড়ে যেতে বলেন। সে সময় চায়। এদিকে একদিন স্ত্রীর সঙ্গে মাবিয়ার ঝগড়া হয়। এ সময় তার স্ত্রী মবিয়াকে বলেন, আপনি চলে যান। আপনাকে ভাড়া দিতে হবে না। মাবিয়া পরে হুমকি দেয় যে সে তার স্ত্রীকে চলে যেতে বাধ্য করতে পারবে না।
আজিজুর রহমান বলেন, “হত্যার দুই দিন আগে আমার স্ত্রী আমাকে বলেছিল, তুমি তাকে লাথি মেরে বের করো।” সে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। আমিও তাকে বের করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই এই ঘটনা ঘটেছে।
ছেলে সাদের বিষয়ে উপাধ্যক্ষ আজিজুর রহমান বলেন, র্যাব সংবাদ সম্মেলন করলে সাদ তার মাকে হত্যার কথা স্বীকার করে। তখন তারা খুব অবাক হলো। এ ঘটনায় পুত্র ও তার সুনামের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সামাজিক মর্যাদাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছেলের বর্তমান মানসিক অবস্থা একমাত্র তিনিই জানেন। পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে, হত্যাকাণ্ডে সাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
“আমি আশা করিনি যে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল একটা বাহিনী এমন কাজ করবে,” সাদের বাবা র্যাব সম্পর্কে বলেন।
এদিকে র্যাব-১২ বগুড়ার কোম্পানির কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। বিভিন্ন মোবাইল নম্বরে র্যাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও উত্তর পাওয়া যায়নি। কোম্পানি কমান্ডার মেজর এহতেশামুল হক খানকে বগুড়ার বাইরে বদলি করা হয়েছে। এর আগে গত ১০ নভেম্বর বগুড়া-নওগাঁ জেলা মহাসড়কের ‘আজিজয়া মঞ্জিল’ বাড়িতে খুন হন উম্মে সালমা। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ছেলে সাদ বিন আজিজুরকে আটক করা হয়েছে। সে সময় র্যাব জানায়, বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ছোট ছেলে সাদ বিন আজিজুর (১৯) মা উম্মে সালমা খাতুনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। শুধু তাই নয়, লাশটি ওড়না দিয়ে বাড়ির ফ্রিজারে রাখা হয়েছে।
তবে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর ২০২৪) পুলিশ দাবি করেছে, ওই বাড়ির ভাড়াটিয়াই উম্মে সালমা খাতুনকে হত্যা করে লাশ ফ্রিজে রেখেছিল, ছেলের নয়।