Shopping cart

  • Home
  • বাংলাদেশ
  • অন্যান
  • দূর্দিনের রাজনীতি থেকে জকসু নির্বাচনের দায়িত্ব : জবি ছাত্রদলের মনিরুজ্জামান মনিরের রাজপথ থেকে নির্বাচনী মাঠে উত্থান

দূর্দিনের রাজনীতি থেকে জকসু নির্বাচনের দায়িত্ব : জবি ছাত্রদলের মনিরুজ্জামান মনিরের রাজপথ থেকে নির্বাচনী মাঠে উত্থান

নভেম্বর ২৩, ২০২৫

দূর্দিনের রাজনীতি থেকে জকসু নির্বাচনের দায়িত্ব : জবি ছাত্রদলের মনিরুজ্জামান মনিরের রাজপথ থেকে নির্বাচনী মাঠে উত্থান।

দূর্দিনের রাজনীতি থেকে জকসু নির্বাচনের দায়িত্ব : জবি ছাত্রদলের মনিরুজ্জামান মনিরের রাজপথ থেকে নির্বাচনী মাঠে উত্থান।

মুসফিকুর রহমান, জবি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে এক পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য নাম মনিরুজ্জামান মনির। দীর্ঘদিন ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এই তরুণ নেতা রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রাম, শাসকের দমন-পীড়ন, সংগঠনের দুর্দিন এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের অবিচল লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে নিজের অবস্থানকে শক্ত ও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক সদস্য মনিরুজ্জামান মনির এবার নতুন পরিচয়ে, নতুন দায়িত্বে— জকসু নির্বাচন ২০২৫-এর কার্যনির্বাহী সদস্য পদে মনোনীত হয়েছেন। রাজনীতি, সংগ্রাম ও আদর্শের ধারাবাহিকতায় এটি শুধু একটি পদ নয়; এটি তার দীর্ঘদিনের আন্দোলনমুখী যাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি।

বারবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দাদা, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি বাবা এবং পৌর ছাত্রদলের সভাপতি বড় ভাই—পরিবারের এই তিনজনের রাজনৈতিক পথচলাই মনিরকে ছোটবেলা থেকেই অনুপ্রাণিত করেছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কঠিন সময় পার করে পুরো পরিবারকে দীর্ঘদিন ঘরছাড়া থাকতে হয়েছে; আর সেই অভিজ্ঞতাই মনিরকে শিখিয়েছে রাজনীতিকে মানবিক, দায়িত্বশীল ও ইতিবাচকভাবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি।

মনিরের লক্ষ্য—প্রতিহিংসামুক্ত, শিক্ষার্থী ও সমাজের কল্যাণে নিবেদিত ওয়েলফেয়ারভিত্তিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা। তার দৃঢ় বিশ্বাস, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে মতের অমিল থাকবে—আর এই মতের ভিন্নতাই রাজনীতির আসল সৌন্দর্য।

মনিরুজ্জামান মনিরের রাজনীতির শুরুটা ৩রা মার্চ ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরপরই সেই ভয়াবহ সময়ে যখন ক্যাম্পাসে বিরোধী মতের রাজনীতি ছিল প্রায় দমবন্ধ পরিস্থিতির মধ্যে। ছাত্রদল তখন নানা বাধা, হামলা-মামলা ও নিষেধাজ্ঞার মুখে টিকে থাকার লড়াই করছে। ঠিক সেই সময়ে মনির সামনে এগিয়ে এসে সংগঠনের পতাকা হাতে নেয়।

শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা, আন্দোলন কিংবা প্রশাসনিক জুলুম— সবক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন অগ্রভাগে। দলকে সংগঠিত রাখা, নতুন কর্মী তৈরি করা, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া— তার নেতৃত্বের এই গুণগুলোই তাকে ছাত্রদলের ভরসার জায়গায় নিয়ে আসে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দমন-পীড়নের ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বৈধ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। সেসব সময় মনির ছিলেন আহত সহপাঠীদের পাশে, আইনি ও সাংগঠনিক সহায়তায় সক্রিয়, আবার পরদিনই আন্দোলনের মঞ্চে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে অন্যদের সাহস জুগিয়েছেন। সংগঠনের অনেকেই তার এই ধারাবাহিকতাকে “দূর্দিনের ভরসা” বলে উল্লেখ করেন দলীয় সহকর্মী ও সংশ্লিষ্টরা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত কয়েক বছরে শিক্ষার্থী অধিকার আদায়কে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি বড় আন্দোলন হয়েছে। তার মধ্যে জকসু নির্বাচনের দাবি, আবাসন সংকট নিরসন, ও আবাসন ভাতা চালুর আন্দোলন ছিল উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মনির ছিলেন অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী।

১৯৯০-এর পর থেকে স্থবির থাকা জকসুকে পুনর্জীবিত করার দাবিতে যখন শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছিল, তখন মনিরুজ্জামানের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মিছিল-মিটিং থেকে শুরু করে স্মারকলিপি প্রদান, প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক— সবখানেই তার সক্রিয় অংশগ্রহণ তাকে শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।

আন্দোলনের কঠিন সময়ে ছাত্রদলের এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বড় সমস্যা হলো শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট। প্রচুর শিক্ষার্থীকে মেস ও বাসায় উচ্চ ভাড়া দিয়ে থাকতে হয়। এই সমস্যার সমাধানে আন্দোলন যখন নতুন মাত্রা পায়, মনির তখন মেস মালিকদের বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ, প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় চাপ সৃষ্টি এবং শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো তুলে ধরার কাজে নেতৃত্ব দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন ভাতা চালুর দাবিতে তার নেতৃত্বাধীন আন্দোলনকে শিক্ষার্থীরা এখনও সফল ও সংগঠিত আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করেন।

মনিরুজ্জামান মনির শুধু রাজনীতি করেননি, তিনি আন্দোলনকে করেছেন সাংগঠনিক ও নিয়মতান্ত্রিক। তার এই ধারাবাহিক ভূমিকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতির প্রত্যেক স্তরের মানুষের নজর কেড়েছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে শিক্ষক–শিক্ষার্থী সবাই তার দায়িত্বশীলতা, সময়ানুবর্তিতা ও সংগঠনিক দক্ষতার কথা স্বীকার করেন।

তার নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো প্রতিকূলতার মাঝেও সংগঠনকে বাঁচিয়ে রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা।

যখন মিছিলে যাওয়ার সুযোগ ছিল না, তখন তিনি সংগঠনকে সক্রিয় রাখতে পোস্টার, লিফলেট বিরণ, ডিপার্টমেন্ট ভিত্তিক জনসংযোগ ও নতুন কর্মী অনুসন্ধানে মনোনিবেশ করেন।

এভাবেই ধীরে ধীরে সংগঠনের ভেতরে তার গ্রহণযোগ্যতা ও নেতৃত্বের শক্তি বাড়তে থাকে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ঐতিহাসিক মূহূর্ত। বহু বছরের দাবি পূরণ হচ্ছে ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ এ। এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে মনিরুজ্জামান মনিরকে মনোনীত করা হয় তার দীর্ঘদিনের সংগ্রাম, দক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিতে।

এই মনোনয়ন শুধু তার ব্যক্তিগত অর্জন নয় বরং ছাত্রদলের প্রত্যাহিক আন্দোলনের প্রজন্মের স্বীকৃতি, ক্যাম্পাস রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক ধারার শক্তিশালী উপস্থিতির প্রতীক।

কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে তার দায়িত্ব হবে নির্বাচনের সার্বিক পরিচালনা, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা, বিভিন্ন কমিটি ও উপকমিটির কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকা এবং নির্বাচনকে সুন্দর, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্যভাবে সম্পন্ন করার কাজে অংশ নেওয়া।

আবাসন ভাতা, জকসু পুনর্গঠন এবং অন্যান্য অধিকার আন্দোলনে তার পাশে থাকা শিক্ষার্থীরা মনিরের মনোনয়নকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তার অবস্থান জকসুকে আরও কার্যকর করবে, তার মতো রাজপথের পরীক্ষিত এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমস্যার জ্ঞান সম্পন্ন একজন নেতা কার্যনির্বাহী সদস্য হওয়ায় একটি ভারসাম্যপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করবে।

মনিরুজ্জামান মনির নিজেও তার দায়িত্বকে শিক্ষার্থীদের অঙ্গীকার হিসেবে ব্যক্ত করে বলেন, “জকসু নির্বাচন শুধু একটি নির্বাচন নয়; এটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনার ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমি চাই এই নির্বাচন স্বচ্ছ হোক, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়ুক, আর জকসু সত্যিকারের ছাত্রস্বার্থ রক্ষার কেন্দ্র হয়ে উঠুক।”

এছাড়াও শিক্ষার্থীদের দাবি এবং অধিকার আদায়ের বিষয়ে মনিরুজ্জামান বলেন, আমি সদা সর্বদা চেষ্টা করি আমার ভাই বোনদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন থাকতে, আমাদের সংকট বহুমুখী, তাই শুধুমাত্র আমার প্রতিশ্রুতি নয় বরং সর্বপ্রথম কাজ হবে আমার ভাই-বোনদের আবাসন সংকট নিরসনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে দাবি আদায় নিশ্চিত করা।

তিনি আরও বলেন, প্রতি নিয়ত আমার বোনেরা রাস্তায় হ্যারেজমেন্টের শিকার হচ্ছে এ বিষয়ে প্রশাসন নিরব দর্শক হয়ে বাংলা সিনেমার পুলিশের ভূমিকা রাখছে। শিক্ষার্থীরা চড়া মূল্য দিয়ে মেসে থাকছে। কখনো প্রশাসনের কাউকে বাড়ি মালিকদের ডেকে কথা বলতে শুনিনি। অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের বাড়ির মালিকদের এ জুলুম থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে যা কিছু করণীয় যদি সুযোগ পাই আমি আমার সর্বশেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও করতে চেষ্টা করবো।

শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, রাজপথের এই নির্ভিক মুখটি নির্বাচনের মাঠেও একই সাহস, সততা ও নিষ্ঠা দেখাবেন।

দূর্দিনের সংগ্রাম, রাজপথের নেতৃত্ব, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন— সবকিছু মিলিয়ে মনিরুজ্জামান মনিরের রাজনৈতিক যাত্রা এক রোল মডেল হয়ে উঠেছে। আর সেই যাত্রারই আরেকটি মাইলফলক হলো জকসু নির্বাচনের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে তার গুরুত্বপূর্ণ মনোনয়ন। এই দায়িত্ব একদিকে যেমন তার দীর্ঘ সংগ্রামের স্বীকৃতি, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিকে ইতিবাচক ধারায় এগিয়ে নেওয়ার একটি বড় সুযোগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *