স্টাফ রিপোর্টার: দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও হাইওয়ে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগীদের’ প্রভাব বিদ্যমান—এমন অভিযোগ উঠেছে একাধিক সূত্রে। এতে দেশের ব্যস্ততম ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলো নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বলা হচ্ছে, সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠতা, তদবির, ঘুষ–দুর্নীতি ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এখনো হাইওয়ে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বহাল আছেন।
রহমত উল্লাহ’র বিতর্ক পেরিয়ে ফের গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিং ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ, অনিয়ম ও মাদক কারবারে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠে আসছে।
তিনি সাবেক সরকারের সময় নিয়মিত পদোন্নতি পেয়ে হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ রিজিয়নে দায়িত্ব পালন করেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পাল্টে যাওয়ার পর তিনি আচমকা কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়ন পান। এরপর ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।
গণমাধ্যম যুগান্তরে ২০২৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ও ১০ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে তার বিরুদ্ধে
জব্দ মালখানা থেকে ইয়াবা সরানো,সাড়ে তিন লাখ পিস ইয়াবা বিক্রির অভিযোগ, অনিয়ম ও ঘুষ লেনদেন- এসব বিষয় তুলে ধরা হয়।
অভিযোগ থাকার পরও ২০২৫ সালের ১১ আগস্ট তাকে আবারও হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর রিজিয়নে পদায়ন করা হয়।
বিশ্বস্ত একাধিক সূত্রের দাবি—রহমত উল্লাহ বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে হাইওয়ে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করে তিন মাসের মধ্যেই গাজীপুরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে পোস্টিং নিশ্চিত করেন।
২৫তম ব্যাচের একাধিক পুলিশ সুপার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- এসপি রহমত উল্লাহর ঘুষ–দুর্নীতির বিষয়টি বাহিনীতে ওপেন সিক্রেট। তবুও তিনি অর্থ খরচ করে পোস্টিং পাওয়ায় সবাই বিস্মিত।
শাহিনুর আলম খান’র সরকার পরিবর্তনের পরও টিকে থাকা সুবিধাভোগী ২০০৫ সালে ২৪তম ব্যাচে এএসপি হিসেবে চাকরিতে যোগ দেওয়া মোহাম্মদ শাহিনুর আলম খানও তদবির ও বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তির অভিযোগে আলোচিত।
২০১৮ সালের আন্দোলন–বিরোধী সময় তার কঠোর ভূমিকার কারণে তিনি তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি পান।
সে বছরই তাকে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এরপর ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর তাকে অ্যাডিশনাল ডিআইজি (সুপার নিউমারারি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়—যেখানে পদটি প্রকৃতপক্ষে শূন্য ছিল না।
২০২৪ সালে সরকার পরিবর্তনের পর বেশিরভাগ সুবিধাভোগী কর্মকর্তা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেলেও শাহিনুর আলম নিজেকে উচ্চপর্যায়ের তদবিরে রক্ষা করতে সক্ষম হন—এমন অভিযোগ রয়েছে।
২০২৫ সালের ২১ আগস্ট তাকে হাইওয়ে পুলিশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কুমিল্লা রিজিয়নের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়োগ নিয়ে বাহিনীর ভেতরে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
মোহাম্মদ জাকারিয়া: রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ, তবু হাইওয়েতে বহাল দায়িত্ব মোহাম্মদ জাকারিয়া ২০১৬ সালের ৫ এপ্রিল এসপি পদে পদোন্নতি পান।
মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিএনপি–জামায়াত দমনে কঠোর ভূমিকা রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ফলে তিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি পান।
২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর তাকেও অ্যাডিশনাল ডিআইজি (সুপার নিউমারারি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
এরপর ২০২৩ সালের ২ আগস্ট তাকে হাইওয়ে পুলিশের খুলনা রিজিয়নে এসপি পদে পোস্টিং দেওয়া হয়, যেখানে তিনি এখনো দায়িত্ব পালন করছেন।
নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে: অভিযোগ পরিবহন খাতের
পরিবহন মালিক–শ্রমিকরা অভিযোগ করছেন—
মহাসড়কে চাঁদাবাজি,মাদক পরিবহন,দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা,চেকপোস্টে অনিয়ম, এবং দায়িত্বশীলদের জবাবদিহির অভাব—এসব সমস্যা বাড়ছে।
তাদের দাবি—বিতর্কিত ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা দায়িত্বে বহাল থাকলে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ দেশের জাতীয় রুটগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়বে।
ফলে নিম্নোক্ত ঝুঁকিতে পড়বে ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশ:
ঢাকা-চট্রগ্রাম – কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক একদিকে যেমন বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানির প্রধানতম মহাসড়ক অন্যদিকে এটি এমন এক রুট যেটি টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম হয়ে বড়বড় ইয়াবার চালান ঢাকা হয়ে সারাদেশে পৌঁছানোর একমাত্র মহাসড়ক। তাছাড়া দেশকে অস্থিতিশীল করতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ কর্তৃক মিয়ানমার থেকে অবৈধ অস্র গোলাবারুদ চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পৌঁছাতে হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা এবং গাজীপুর রিজিয়ন ব্যবহারে এসপি শাহিনুর ও এসপি রহমত সহযোগিতা করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে বেনাপোল- যশোর- ঢাকা জাতীয় মহাসড়ক এসপি জাকারিয়ার নিযন্ত্রনাধীন। বেনাপোল থেকে অবৈধ ভাবে অস্ত্র বাংলাদেশের প্রবেশ করতে এবং তা ঢাকায় নিয়ে আসতে এসপি জাকারিয়া পতিত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের সাহায্য করতে পারে।
পুলিশের অবস্থান এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—“সব অভিযোগ যাচাই করা হবে। অনিয়ম প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রাখা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা তারা দেননি।
