মাহফুজ কাউসার ছাদি: ওয়েব চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তা নাসরিন আউয়াল মিন্টু বলেছেন,কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ ব্যাতিত দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধন সম্ভব নয়।দেশের জনগণের অর্ধেকের চাইতে বেশী নারী উল্লেখ করে তিনি বলেন,নারীদের সর্বক্ষেত্রে সহায়তা করতে হবে।তিনি বলেন, সমাজে একজন নারী প্রতিষ্ঠিত হলে একটি পরিবার প্রতিষ্ঠিত হয়, তাই নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলতে হবে। তিনি বলেন, বিগত দিনে নারীদের কাজ করার তেমন সুযোগ-সুবিধা ছিল না, কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। নারীদের হয়রানিমুক্তভাবে ঋণ সুবিধা দিলে তারা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে পারবেন, তবে ব্যাংকগুলো নারীদের ঋণ দিতে আগ্রহী নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নাসরিন আউয়াল মিন্টু সিলেট উইমেন চেম্বার্সকে স্থানীয় পর্যায় থেকে ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান এবং ব্যাংকগুলোর কাছে নীতিগতভাবে ঋণ প্রদানের অনুরোধ প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, নারীদের উৎপাদিত অনেক পণ্য এখন বিদেশের বাজারে রপ্তানি হচ্ছে এবং সিলেট অঞ্চলের সকল নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আনার মাধ্যমে নারী সমাজ অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি হিসেবে দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিসিকের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন। নারীদের চাহিদা হলো সমতা, মর্যাদা ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হয়ে দেশ ও জাতির জন্য অবদান রাখা।
তিনি বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সিলেট উইমেন চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নবনির্বাচিত পরিচালনা পরিষদের অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন তাহিবা সিদ্দিকী এবং গীতা থেকে পাঠ করেন দেবব্রত রায় দিপন। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব শুরু হয়, যেখানে পরিচালনা পরিষদের নবনির্বাচিত পরিচালকবৃন্দ তাদের প্রতিক্রিয়া ও কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিষদের নতুন সভাপতি লুবানা ইয়াছমিন শম্পা।
জান্নাতুল নাজনিন আশার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উইমেন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও বিশিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তা নাসরিন আওয়াল মিন্টু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসিস্ট্যান্ট হাই কমিশন অফ ইন্ডিয়ার সেকেন্ড সেক্রেটারি (এইচওসি ও কমার্স) টি. হ্যাংসিং এবং এসিস্ট্যান্ট হাই কমিশন অফ ইন্ডিয়ার সেকেন্ড সেক্রেটারি (প্রেস, ইনফরমেশন, কালচার এন্ড এডুকেশন) মানস কুমার মুস্তাফী,সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিসিকের ডিজিএম সোহেল হাওলাদার, ওয়েবের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি রেবেকা চৌধুরী, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলজার আহমদ হেলাল ,সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ইশতিয়াক সিদ্দিকী, এফবিসিসিআই’র সাবেক পরিচালক হিজকিল গুলজার,ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন বিভাগীয় কমিটির সভাপতি নাজমুল কবির পাবেল, নাসিব সিলেটের প্রেসিডেন্ট আলিমুল এহসান চৌধুরী, গ্রাসরুটসের জাতীয় সমন্বয়কারী অনিতা দাস গুপ্ত, এবং সুনামগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসডব্লিউসিসিআই’র সহ-সভাপতি আলেয়া ফেরদৌসি তুলি ও পরিচালক সামা হক চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাকিয়া ফাতেমা লিমি চৌধুরী, সায়েমা সুলতানা চৌধুরী, তাহমিনা হাসান চৌধুরী, গাজী জিনাত আফজা, রেহানা ফারুক শিরিন, রেহানা আফরোজ খান, শাহানা আক্তার এবং হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সুদীপ রঞ্জন সেন।
ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনের মানস কুমার মুস্তাফী বলেন,নারীরা মায়ের জাতি।নারীরা অগ্রসর হলে সমাজ অগ্রসর হবে।নতুন প্রজন্ম সমাজের জন্য গৌরবের কাজ করবে।ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের টি. হ্যাংসিং বলেন, নারীদের ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হওয়ার পথ পরিষ্কার করতে হবে, যাতে প্রান্তিক পর্যায়ের নারীরাও অর্থনীতির মূল স্রোতায় নিজেদের যাত্রা ত্বরান্বিত করতে পারেন। তিনি এ বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট উইমেন চেম্বারের নিজস্ব ভবন নেই এবং ভাড়া বাসায় কার্যক্রম চলছে। তিনি উইমেন চেম্বারের নিজস্ব কার্যালয় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান এবং জেলা প্রশাসকের সহযোগিতার আশ্বাসের কথা উল্লেখ করেন। তিনি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য একটি মার্কেট গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন এবং ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে নারী চেম্বারের মধ্যে সম্মিলনের সুযোগ সৃষ্টির অনুরোধ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে লুবানা ইয়াছমিন শম্পা বলেন, এই অভিষেক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সিলেটে নারীদের জন্য একটি যুগান্তকারী প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু হয়েছে, যা নারী উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের নতুন পথ খুলে দেবে। অনুষ্ঠানের মধ্যাহ্নভোজনের পর তৃতীয় পর্বে সিলেটের বেতার ও টেলিভিশনের শিল্পীদের নিয়ে একটি মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।