Shopping cart

Magazines cover a wide array subjects, including but not limited to fashion, lifestyle, health, politics, business, Entertainment, sports, science,

  • Home
  • সারাদেশ
  • দোয়ারাবাজার
  • দোয়ারাবাজারে চেলার পাড়ের মানুষের কান্না দেখার কেউ নেই, বালু উত্তোলনে বিলিন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম

দোয়ারাবাজারে চেলার পাড়ের মানুষের কান্না দেখার কেউ নেই, বালু উত্তোলনে বিলিন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম

এপ্রিল ২৯, ২০২৫

সোহেল মিয়া, দোয়ারাবাজার(সুনামগঞ্জ): সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের পাহাড়ি খরশ্রোতা চেলা নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষের কান্না দেখার ৃকেউ নেই। নদী থেকে অব্যাহত বালু উত্তোলনে প্রতিনিয়তো বিলীন হচ্ছে একের পর এক গ্রাম।

ছবি: নদীর পাড় কেটে বালু নেওয়ায় সারপিনপাড়া ও পূর্বচাইরগাঁও গ্রাম বিলিনের দৃশ্য।
ছবি: নদীর পাড় কেটে বালু নেওয়ায় সারপিনপাড়া ও পূর্বচাইরগাঁও গ্রাম বিলিনের দৃশ্য।

একসময় ছিলো সবুজ আর সাদায় মিশ্রিত কাশফুলের রূপ সৌন্দর্য ও প্রাচুর্যে ভরা পাহাড়ি নদী সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সোনালী চেলা নদী। ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে উৎপন্ন হওয়া নদীটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা নরসিংপুর ইউপি’র সারপিনপাড়া -পূর্বচাইরগাঁও গ্রামের মাঝ দিয়ে। উজানের পাথরের গায়ে চুষে বের হওয়া সোনালী চেলা নদীর স্বচ্ছ জল ও নদীর দুপাশের মনোরম পরিবেশ একসময় পর্যটকদের আকৃষ্ট করলেও এই নদীই এখন সবার আতঙ্কের নাম আর নদীর পাড়ের মানুষের অভিশাপের নাম। ঢলের সঙ্গে নেমে আসা মূল্যবান বালু এই নদীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, বালু তোলার জন্য চেলা নদী ইজারা নদী ইজারা দিয়ে জেলা প্রশাসন প্রতিবছর প্রায় কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে। নদীর ইজারাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদীর তলদেশ খুঁড়ে এবং সারপিনপাড়া, পূর্বচাইরগাঁও,পূর্বসোনাপুর,রহিমের পাড়া,নাছিমপুর ও সোনাপুর গ্রামের কাছে নদীরপাড় কেটে বালু উত্তোলন করছে। এতে বিলীন হচ্ছে রাস্তাঘাট, মানুষের পাঁকা,কাঁচা ঘরবাড়ি ও সরকারি জমি। পাড় কেটে বালু উত্তোলন করায় ইতোমধ্যে চেলানদীর তীরের এই ৬ গ্রামের অনেক পতিত জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট নদীগর্ভে চলে গেছে। নদীর পানি শুঁকিয়ে গেলে নদীর মাঝে কোথাও স্তূপের মতো জেগে উঠেছে। গ্রামগুলোর শেষ সীমানায় বর্তমানে পাকা বসতঘরের অংশ নদীতে পড়ে রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীর পাড় কাটা, শেপ মেশিন ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের সঙ্গে ইজারাদার, রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রশাসনের লোকজন জড়িত।

নদীর তীরের বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক বছর ধরেই ইজারার দোহাই দিয়ে একসময়ের প্রাকৃতিক সুন্দর্য্যের ভরপুর সোনালী চেলা নদীর তীরে পরিবেশ ধ্বংসের তাণ্ডব চলেছে ব্যপরোয়া ভাবে। নদীর অব্যাহত ভাঙনে ইতোমধ্যে সারপিনপাড়া, পূর্বচাইরগাঁও,সোনাপুর, নাছিমপুর, রহিমের পাড়া ও পূর্বসোনাপুর গ্রামের শতাধিক বসতভিটা ও কয়েকশতক একর ফসলি জমি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, একটি বড় গ্রুপ সেখানে থেকে বিজিবিকে ম্যানেজ করে বালু তোলায় সব নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আগে আওয়ামী লীগের এমপি ও নেতাদের নাম ভাঙিয়ে এসব করা হয়েছে। নদীর পাড় কেটে অন্তত ১০-১৫ জন কোটিপতি হয়েছে। অভিযোগ ও প্রতিবাদ করে কোনো বিচার পাওয়া যায়নি। উল্টো হামলা ও মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে।

সারপিনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) নেতা হোসাইন আহমদ বলেন, স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তিদের হাতে নিয়েই রমরমা চলছে চেলা নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। স্থানীয় প্রশাসন ও এরসাথে জড়িত।

নদীর তীর কাটা অব্যাহত থাকায় নদীর গতিপথ ইতোমধ্যে অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। নদী হতে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে এর রূপ আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

পূর্ব চাইরগাঁও গ্রামের বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম নুরু বলেন,প্রাকৃতিক সুন্দর্য্যে ভরপুর চেলানদী এক সময় মানুষের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র ছিল। সনাতন পদ্ধতিতে হাতের বেলচা দিয়ে বালু তুললে বহু বছর কাজ করা যেত। সব নিয়ম উপেক্ষা করে লুটপাট করেছে এলাকার লেবাসধারী আওয়ামীলীগ নেতারা। একসময়ে এই নদীতে মানুষ বেড়াতে আসতো। আর এখন দেখলেই ভয়ো আতকে উঠে। লুণ্ঠনকারী চক্র লুটপাট বাড়িয়েছে। এ কারণে নদীর তীর ভাঙছে, ঘরবাড়ি, সড়ক বিলীন হচ্ছে। এলাকার পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং নদীকে রক্ষা করতে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু বলেন, প্রশাসনের কেউ এসব অন্যায় কাজে জড়িত নয়। নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলন রোধে আমরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছি। এখন পুরোদমে বালু উত্তোলন বন্ধ আছে। ইজারা দেওয়া না দেওয়া সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বুঝবে বলেও তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *