সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে তীব্র তাপদাহ আর বিদ্যুতের অতিরিক্ত ভেল্কিবাজিতে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে জনজীবন।
তীব্র এই গরমে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের প্রভাবে বিদ্যুৎ না থাকায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। বেশি বিপর্যয়ে পরেছে স্কুল মাদ্রাসায় পড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এতে অনেকেই ক্লাস ছেড়ে গাছতলায় পাঠদান করতে দেখা গেছে। । শিক্ষকরাও অনেকটা বাধ্য হয়ে গাছের নিচেই চালাচ্ছেন পাঠদান কার্যক্রম।
মঙ্গলবার ( ২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে দোয়ারাবাজার উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
সকালে উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়. তীব্র তাপদাহে বিদ্যুৎ না থাকায় আলমদিনা একাডেমির সহকারি শিক্ষক জুয়েল আহমদ,ইয়াকুব আল হাসান ও একজন শিক্ষিকা তিনটি শ্রেনীর পাঠদান করাচ্ছেন গাছতলায়।
জানতে চাইলে শিক্ষকগণ জানান, প্রচন্ড রোদ,আর ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিদ্যুৎ না থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হুমকি হয়ে পড়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস থেকে বেরিয়ে এসে গাছের তলায় বসে ক্লাস করতে চায়। অবহাওয়ার পরিস্থিতি আর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনা করে গাছতলায় ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
আল মদিনা একাডেমির শিক্ষার্থী সামিয়া রহমান জানান, অসহনীয় এই গরমে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারনে কয়েকদিন যাবত শান্তিতে ক্লাস করতে পারছিনা। ক্লাসরুমের চেয়ে গাছের তলায় একটু স্বস্তি পাওয়া যায়।
এদিকে,উপজেলার বাংলাবাজার ও পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও একই চিত্র দেখা গেছে।
বাংলাবাজার ইউনিয়নের বড়খাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ জহিরুল হাসান ভূইয়া জানান, তীব্র গরমের মাঝে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সংখ্যা ও দিন দিন কমে যাচ্ছে।
পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের হাজ্বী কনুমিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিজ আলী জানান,বিদ্যুৎতের এমন ভেলকিবাজিতে প্রতিষ্ঠানের নিয়মশৃঙ্খলা ব্যাহত হচ্ছে। তীব্র তাপদাহে বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছেনা। এতে শিক্ষার্থীরা পাঠদানে মনযোগ হারাচ্ছে। মাঝে মাঝে এমনও হয়, যখন বিদ্যুৎ থাকে তখন শিক্ষার্থীরা শ্রেনীকক্ষে থাকেন। বিদ্যুৎ চলে গেলে গাছতলায় চলে যায়। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে নিজেদেরই টিকে থাকা কষ্ট হয়ে পড়েছে,তাই শিক্ষার্থীদের কিছু বলাও সম্ভব হচ্ছেনা।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে প্রতি ১ ঘন্টা পর পর বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রয়েছে, তবে সরেজমিনে
দেখা গেছে তার ভিন্নচিত্র। দিন অথবা রাত ১ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকলে ৩-৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। কোন কোন এলাকায় ৫-৭ ঘন্টা করেও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাবাজার, নরসিংপুর,পান্ডারগাঁও ছাড়াও
দোয়ারাবাজার উপজেলার বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একই অবস্থা। যে সব প্রতিষ্ঠান টিনের চালা রয়েছে তাদের অবস্থা আরও করুণ। দুপুর হওয়ার আগেই অনেক প্রতিষ্ঠানে বাজে ছুটির ঘণ্টা।
দোয়ারাবাজার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম
জাহিদুল হাসান জানান,
দোয়ারাবাজারে
৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন। সেখানে বিদ্যুৎ আসছে ১০-১২ মেগাওয়াট। তাই লোডশেডিং বেশি হচ্ছে।
প্রায় তিন মাস ধরে এই সমস্যা চলছে। বিদ্যুৎতের সরবরাহ বাড়ানো হলে লোডশেডিং ও কমে যাবে বলে জানান তিনি।
এছাড়া আগাছার কারনে অনেক সময় অতিরিক্ত সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার কথা জানান।
সোহেল মিয়া
দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ)