স্টাফ রিপোর্টার: ২২ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটল অবশেষে। ভারতকে হারানোর সেই স্বপ্নময় মুহূর্ত শুধু মাঠে নয়, প্রেসবক্সেও ছড়িয়ে পড়েছিল উচ্ছ্বাসের স্রোত। ভারত–বাংলাদেশ দ্বৈরথের শেষ মুহূর্তের হতাশা বহুবার দেখেছেন সাংবাদিকরা; তাই এই সাফল্যের স্বাদ তাঁদের কাছেও আলাদা ছিল।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতকে ১–০ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ যখন ঐতিহাসিক জয় তুলল, তখন জাতীয় স্টেডিয়াম জুড়ে রোমাঞ্চের ঢেউ। ম্যাচশেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রবেশের সময় কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ও হামজা চৌধুরীকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। শান্তভাবে চুইংগাম চিবোতে চিবোতে নিজের আনন্দটাই প্রকাশ করলেন হামজা।
যদিও গোলটি করেছেন শেখ মোরসালিন, মধ্যমাঠে পুরো ম্যাচের ছন্দ নিয়ন্ত্রণ করেছেন হামজাই। বল পায়ে সুনিপুণ নিয়ন্ত্রণ, জায়গা বোঝা, সময়জ্ঞান—সবকিছুতেই ছিলেন নিখুঁত। শেষ বাঁশি বাজতেই ক্লান্তিতে মাটিতে পড়ে যাওয়া সেই দৃশ্যই বলে দেয়, তিনি মাঠে কতটা উজাড় করে খেলেছেন।
সেই কারণেই হয়তো তাঁর কণ্ঠেও ছিল গভীর তৃপ্তির সুর—
“আমরা ১৮ কোটি মানুষকে খুশি করেছি। বিশ্বের আর কোথাও এমন অনুভূতি সম্ভব নয়। আমার ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্যগুলোর একটি এটাই।”
লেস্টার সিটির হয়ে এফএ কাপ জয়ের অভিজ্ঞতাও আছে তাঁর ঝুলিতে। তবু ভারতের বিপক্ষে এই জয়কে তিনি আরও বিশেষ মনে করছেন।
জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকের পর থেকেই ধারাবাহিক ছিলেন হামজা, তবে দলীয় ব্যর্থতা অনেক সময় তাঁর আলো ম্লান করে দিয়েছিল। তাই ধৈর্যকেই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি বললেন তিনি—
“স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ইনশা আল্লাহ, খুব দ্রুতই আমরা বড় কোনো টুর্নামেন্টে জায়গা করে নেব। আমরা দেখিয়েছি আমরা পারি। শুধু সময় আর ধৈর্য প্রয়োজন।”
দর্শকভরা স্টেডিয়ামে কম অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের জন্য চাপ ছিল প্রবল। তবে মানসিকতায় বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল ভারতের তুলনায়। এই জায়গাটিই জয়ের অন্যতম কারণ বলে জানালেন হামজা—
“আমি আর শমিত শোম দেরিতে দলে যুক্ত হয়েছিলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল মান বাড়ানো ও মানসিক শক্তি যোগ করা। শেষ চার ম্যাচে শেষ দিকে ভুল করেছি, এবার সেটি ঠিক করতে পেরেছি। বল দখলে খুব ভালো না হলেও স্থিরতা দেখিয়েছি।”
কোচ কাবরেরাও একই সুরে বললেন—
“ট্যাকটিক্যাল পরিকল্পনা অনেক ছিল, কিন্তু সবসময় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয় না। আমরা ভেবেছিলাম বল দখল রাখব, পারিনি। তবে বিপরীত পরিস্থিতিতে মানিয়ে খেলে জিততে পারাই আজকের বড় সাফল্য।”
২২ বছরের হতাশা ভেঙে নতুন আশার আলো দেখিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। আর সেই সফলতার কেন্দ্রে ছিলেন হামজা চৌধুরী—যার কাছে এই জয়ের আনন্দ ১৮ কোটি মানুষের হাসির সঙ্গেই মিশে আছে।



