বিশেষ প্রতিনিধি: ভোলার গ্যাস স্থানীয়ভাবে ব্যবহারের দাবি, সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন এবং ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ—এই তিন দাবিতে রবিবার (২০ এপ্রিল) দিনব্যাপী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে দ্বীপজেলা ভোলা। নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘আগামীর ভোলা’-এর আয়োজনে আয়োজিত কর্মসূচিতে জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজারো মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।
সকাল থেকেই দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন ও সদর উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল নিয়ে মানুষ জড়ো হন শহরের বাংলাস্কুল মাঠে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি, বিজেপি, জামায়াতে ইসলামি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ নানা রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বক্তারা বলেন, “ভোলার গ্যাস দিয়ে আগে ভোলার ঘরে আলো জ্বলুক, এরপর অন্য কোথাও নেওয়ার কথা ভাবা যাক।”
তারা আরও বলেন, “ভোলা একটি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, সম্ভাবনাময় জেলা। কিন্তু আজও এখানে নেই কোনো সরকারি মেডিকেল কলেজ। চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষকে ঢাকায় গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আর ভোলা-বরিশাল সেতু ছাড়া এই দ্বীপজেলার সাথে দেশের মূল ভূখণ্ডের কার্যকর সংযোগ কখনোই সম্ভব নয়।”
সমাবেশ শেষে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর আন্দোলনকারীরা জেলা প্রশাসকের হাতে তিন দফা দাবিতে স্মারকলিপি তুলে দেন। জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণের আশ্বাস দেন।
এই সময় উপস্থিত ছিলেন “দৈনিক সারাদেশ” পত্রিকার তরুণ অনুসন্ধানী সাংবাদিক বিজয় চৌধুরী ও তাঁর টিম। তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে প্রত্যক্ষ করেন আন্দোলনের প্রকৃত চিত্র। বিজয় চৌধুরী বলেন, “এই আন্দোলন কোনো দলীয় নয়, এটি মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই। এখানকার মানুষের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক—নিজেদের সম্পদ আগে নিজেদের কাজে লাগানোই স্বাভাবিক প্রত্যাশা।”
তাঁর টিমের সদস্যরা স্থানীয় কৃষক, শিক্ষার্থী ও নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলে আরও জানতে পারেন, মানুষের মনে ক্ষোভ জমে আছে বহুদিন ধরেই। একজন বৃদ্ধ বলেন, “ভোলার গ্যাস ঢাকায় চলে যাচ্ছে, আর আমরা কাঠ পুড়িয়ে রান্না করি—এটা কি ঠিক?” এক তরুণীর কণ্ঠে ধ্বনিত হয় আর্তি—“ভোলায় যদি সরকারি মেডিকেল কলেজ থাকত, তাহলে বাবা বেঁচে যেতেন!”
আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, যদি দ্রুত দাবিগুলোর বাস্তবায়ন না হয়, তবে আগামী ২৭ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মহাসমাবেশ এবং পর্যায়ক্রমে সচিবালয় ও উপদেষ্টাদের বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, স্থানীয় গ্যাস ঢাকায় সরবরাহের প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত ভোলা। আন্দোলনকারীরা ইতোমধ্যে এলপিজি পরিবহনকারী ইন্ট্রাকো কোম্পানির আটটি গাড়ি আটকে দেন। জনমনে বিশ্বাস—এই আন্দোলন কেবল ক্ষোভ নয়, এটি উন্নয়নের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।