অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম: ৭ নভেম্বর, শহীদ আব্দুস সালাম আজাদের ৩৬তম শাহাদাত বার্ষিকী। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ২৩তম শহীদ। ১৯৮৮ সালের এই দিনে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।
সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি কলেজের এইচএসসি ফলপ্রার্থী এই তুখোড় ছাত্রনেতাকে পাশবিক উল্লাসে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পূর্বপরিকল্পিতভাবে তৎকালীন ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগের নেতৃত্বাধীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সন্ত্রাসীরা তাকে শহীদ করে। শহীদ সালামের বাড়ি ছিল বিশ্বম্ভপুর উপজেলার পলাশ ইউনিয়নের মেরুয়াখলা সড়কেরপাড় গ্রামে।
ভিপি আওলাদ আলী রেজা, জাসদ ছাত্রলীগের বশর ও আজিজ এই হত্যাকান্ডে সরাসরি নেতৃত্ব দেয়। সন্ত্রাসী রেজার বাড়িতে ওৎপেতে থাকা ২০/২৫ জনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সেদিন নিরীহ শিবির নেতা কর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমরা সেদিন ভিপি রেজা বাহিনীর ভয়ংকর নির্মমতা দেখেছি। দা, রামদা ও বল্লমের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করা হয় সালাম ভাইয়ের পুরো দেহ। নাড়িভুড়ি বেড়িয়ে এসেছিল। মারাত্মকভাবে আহত হন জুলহাস (এডভোকেট) ভাই। তাদেরকে উদ্ধার করতে এসে গুরুতর আহত হন তৎকালীন ছাত্রনেতা রেজাউল করিম তালুকদার (এডভোকেট)। সন্ত্রাসীদের আসল টার্গেট ছিলেন রেজা ভাই। আহত হন প্রিন্সিপাল স্যারের বড় ছেলে আহমদ গোলাম জিলানী বাবলু ভাই, মাওলানা তাজ উদ্দিন ভাই ও লোকমান আহমদ। শহীদ সালামের পানি, পানি, পানি,,,,,, বলে আহাজারি এখনো কানে বাজে।
সন্ত্রাসীরা রেজা ভাই, সালাম ভাই ও জুলহাস ভাইকে মৃত ভেবে উল্লাস করে মিছিল দিয়ে চলে যায়। পথচারীরা তিনজনকে রিক্সায় একজনের উপর আরেকজনকে স্তুপ করে তুলে দেয়। অতপর এক সদয় ট্রাক ড্রাইভার তাদেরকে অনেক কষ্ট করে নিজের ট্রাকে তুলে নিয়ে প্রথমে দিঘলী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে অত:পর সিলেট ওসমানী হসপিটালে নিয়ে আসে। ঐদিন বিকেলেই ওসমানী হসপিটালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সালাম ভাই শাহাদাতের অমীয় শুধা পান করেন।
১৯৮৮ সালের ৮ নভেম্বর ছিল সিলেট শহর শিবিরের পূনরুত্থানের দিন, পুন:জন্মের দিন। ১৯৮৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জুয়েল, মুনির ও তপন হত্যার মিথ্যা দায়ভার শিবিরের উপর দিয়ে পাড়ায় পাড়ায় চালানো হয় নারকীয় সন্ত্রাস। চলতে থাকে শিবির নির্মুল অভিযান। সিলেট শহরের প্রতিটি পাড়ায় শিবির কর্মীদের রক্ত ঝরেছে। মামলায় জর্জরিত করা হয় নেতা কর্মীদের। মুরব্বিদের উপরও হামলা হয়। শহরের শিবির নেতা কর্মীরা ঘরবাড়ি ছাড়া হয়। কেউবা কারান্তরীন। বস্তত: ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে সিলেট শহরে শিবির অপ্রকাশ্য হয়ে পড়ে। অনেককে বাধ্য হয়ে আত্মগোপনে চলে যেতে হয়।
শহীদ সালাম ভাইয়ের শাহাদাত সিলেট শহর শিবিরকে নতুন করে প্রানশক্তি যোগান দেয়। ডা. সায়েফ ভাই, ছোহেল ভাইদের সাহসী ও সেরা সিদ্ধান্ত ছিল শহীদি মিছিল। শহীদি মিছিল: নারায়ে তাকবির- আল্লাহু আকবার, সালাম ভাইয়ের রক্ত- বৃথা যেতে দেবো না,,,, সিলেট শহরকে প্রকম্পিত করে। এ শহীদি মিছিলের মধ্যদিয়ে সিলেট শহর শিবির আবার প্রকাশ্যে আসে। তবে এ আসাটা এতো সহজ ছিলোনা, ছিল রক্তস্নাত।
মহান মাবুদ-
আমাদের শহীদদের আত্মত্যাগ কবুল করুন, খুনরাঙ্গা রক্তপিচ্ছিল পথে আমাদেরকে আজীবন সাবিত কদম রাখার তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক : অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম।
সাবেক সেক্রেটারি সুনামগঞ্জ জেলা শিবির।
নায়েবে আমীর সিলেট মহানগর বিমান বন্দর থানা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও সদস্য সচিব দোয়ারা শিক্ষা ফাউন্ডেশন.সুনামগঞ্জ।