মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:- মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী ১১নং শরীফপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক পাচার ও মানব পাচার উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় তা প্রতিকারের জন্য উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মৌলভীবাজার ইউনিট বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী।
গত মঙ্গলবার (১৫অক্টোবর) সন্ধায় অভিযুক্তদের সংশোধনপূর্বক পূনর্বাসনের জন্য এক সভার আয়োজন করে এলাকাবাসী, এর আগে তাদের কাছে সংশোধন হওয়ার জন্য প্রতস্তাব করা হয়, এবং বলা হয় তারা এই অপকর্মগুলো থেকে ফিরে এলে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করা হবে এবং সকলের জন্য পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানসহ যারযার যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যবসাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এলাকাবাসীর প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়াতে তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর নিকট অভিযোগসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন এলাকাবাসী ।
সেনাবাহিনীর নিকট দেওয়া তাদের অভিযোগপত্র হুবহু নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ-
বরাবর, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মৌলভীবাজার ইউনিট, মৌলভীবাজার।
বিষয় : কুলাউড়া থানার অন্তর্গত ১১নং শরীফপুর ইউ.পি’র আওতাধীন ১নং ওয়ার্ডে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক পাচার ও মানব পাচার উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় তা প্রতিকারের জন্য আবেদন।
জনাব,
যথাবিহীত সম্মান প্রদর্শন পূর্বক সবিনয় নিবেদন এই যে, আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারীগণ মৌলভীবাজার জেলাধীন কুলাউড়া উপজেলার ১১নং শরীফপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাগণ। আমরা এই মর্মে আপনার নিকট আবেদন জানাইতেছি যে, আমাদের ইউনিয়নের অন্তর্গত ১নং ওয়ার্ড ভারতের সীমান্তবর্তী। তাই কতিপয় অসাধু ব্যক্তি তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাছিলের জন্য ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার ও মানব পাচার করে থাকেন। তাছাড়া বিগত সরকারের আমল থেকে অদ্যাবধি অত্র এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই প্রভৃতি কার্য চলিয়া আসিতেছে। কুচক্রী মহল বিগত সরকারদলীয় কিছু প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে অদ্যাবধি এসব কাজ নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সচেতন এলাকাবাসী এ বিষয়ে একাধিকবার প্রতিবাদ করা সত্বেও কোন সুরাহা হচ্ছে না। কুচক্রী মহলের এহেন কার্যকলাপের কারণে এলাকার তরুণ সমাজও অবণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ন’মৌজা চাতলা ঘাট ও লালারচক সীমান্তে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবীদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। যা আমরা সচেতন মহলের জন্য অশুভ বার্তা বহন করছে। এহেন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমাদের তরুণ সমাজ চরম অবনতির দিকে যাবে বলে প্রতীয়মান হয়। তাছাড়া কিছু চিহ্নত চোর ও ডাকাত গরু, মহিষ, ছাগল চুরি ও ছিনাতই কাজে লিপ্ত রয়েছেন। তারা এলাকায় ও এলাকার বাইরে প্রতিনিয়ত এহেন কার্য করে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩/১০/২০২৪ইং তারিখে ডাকাতের লিডার তৈমুছ আলী, পিতাঃ মৃত আরশ আলী, গ্রামঃ সনজরপুর (বেরীগাঁও), ডাকঘরঃ তেলিবিল, উপজেলাঃ কুলাউড়া, জেলাঃ মৌলভীবাজার। তাহার নেতৃত্বে প্রায় ৮/১০ জনের একটি টিম কমলগঞ্জ উপজেলাধীন আলীনগর ইউনিয়নের অন্তর্গত লাংলীয়া গ্রামের জনৈক আকবর মিয়ার মহিষ চুরি করে ন’মৌজায় নিয়ে আসার পথে চাতলাপুর বিজিবি ক্যাম্পের দক্ষিণ পার্শ্বে ভারতীয় সীমান্তবর্তী কদমতলী স্থানে লাংলীয়ার জনসাধারণের ধাওয়ার সময় রমিজ মিয়া নামের চুর ব্যক্তি ধরা পড়েন এবং অন্যান্য চুররা দৌঁড়াইয়া পালিয়ে যায়। তিনি জনতার রুষের মুখে তাদের লিডার তৈমুছ আলী, মাজিদ আলী ও তার দুই ছেলের নাম উল্লেখ করেন। উক্ত ডাকাত দলের সাথে ১৫/২০ জন লোক জড়িত আছেন। মাদক পাচার, মানব পাচার, চুরি, ডাকাতি প্রভৃতি তাদের নিত্যদিনের পেশা। ইতিপূর্বে তারা ভারতে মানব পাচারের সময় ভারতীয় বিএসএফ এর গুলিতে ১৪ বছরের একটি মেয়ে স্বর্ণা দাশ ও ১৬ বছর বয়সী ফেরদাউস নামের একটি ছেলে নিহত হয়। এতে সীমান্তে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এলাকায় তাদের প্রভাব এতটাই বেশি যে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে কেউ সাহস পায় না। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে গেলে গুম ও খুন খারাবীর ভয় দেখায়। এই মুষ্ঠিমেয় কতিপয় অসাধু দুষ্কৃতিকারীদের জন্য আমাদের পুরো এলাকা কলংকিত ও আতংকিত। তাছাড়া তাদের কারণে সীমান্তে বার বার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় আমরা নিরীহ, শান্তিপ্রিয় সাধারণ এলাকাবাসী তাদের এহেন কার্যকলাপের জন্য বিভিন্ন জায়গায় লজ্জার সম্মুখীন হচ্ছি। তারা কতিপয় ব্যক্তির কারণে আমরা ন’মৌজার পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ হয়। এমতাবস্থায় তাদের এহেন কার্যকলাপ থেকে আমরা এলাকাবাসী মুক্তি চাই।
অতএব, মহোদয় সমীপে প্রার্থনা যে, দয়া বিতরণে আমরা এলাকাবাসী সাধারণ জনগণের কথা সদয় বিবেচনা পূর্বক
বর্ণিত দুষ্কৃতিকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে এলাকায় শান্তি স্থাপনে আপনার সদয় মর্জি কামনা করি।
১১নং শরীফপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড!
চুরের তালিকা:-
১। মোঃ তৈমুছ আলী, পিতাঃ মৃত আরশ আলী, (গ্যাং লিডার) গ্রামঃ সনজরপুর।
২। মোঃ রমিজ আলী, পিতাঃ ইয়াকুব আলী, গ্রামঃ সনজরপুর।
৩। রহিম আলী, পিতাঃ মৃত তাহির আলী, গ্রামঃ সনজরপুর।
৪। মোঃ মখলিছ আলী, পিতাঃ মোঃ তৈমুছ আলী, গ্রামঃ সনজরপুর।
৫। মোঃ মাজিদ মিয়া, পিতাঃ মৃত সিরাজ মিয়া, গ্রামঃ সনজরপুর।
৬। ময়নুল ইসলাম, পিতাঃ মনির আলী, গ্রামঃ সনজরপুর।
৭। শুকুর আলী, পিতাঃ অজ্ঞাত, গ্রামঃ সনজরপুর।
৮। রুমেন মিয়া, পিতাঃ মৃত শওকত আলী, গ্রামঃ সনজরপুর।
৯। জাকার মিয়া, পিতাঃ মৃত উম্মর আলী, গ্রামঃ সনজরপুর।
১০। ছন্দর আলী, পিতাঃ মৃত আরশ আলী, গ্রামঃ সনজরপুর।
১১। আলমাছ মিয়া, পিতা-সরিয়ত খান, গ্রামঃ সনজরপুর।
১২। আমীর খান, পিতা- সরিয়ত খান, গ্রামঃ সনজরপুর।
১৩। শাহবউদ্দিন, পিতা-ছকাই আলী, গ্রামঃ হরিপুর, ২নং ওয়ার্ড।
১৪। ফজই, পিতা-কুদ্দুস আলী, গ্রামঃ বাগজুর, ৩নং ওয়ার্ড।
১৫। কামাল পিতা-অজ্ঞাত গ্রামঃ তেলিবিল, ৩নং ওয়ার্ড।
১৬। মবশ্বির আলী, পিতা-কুদ্দুস আলী, গ্রামঃ বাগজুর, ৩নং ওয়ার্ড।