জবি প্রতিনিধি: আগামী ২৭ নভেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ উল্লেখ করে রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নির্বাচনের দামামা বাজলেও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে জকসুর নীতিমালা। নীতিমালার খসড়ায় নির্বাচনের জন্য ১৯ টি পদ রাখা হলেও উপেক্ষিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদ৷ বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থী ও এক্টিভিস্টদের মধ্যে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের অনুষ্ঠিত সভায় খসড়াটি সরকারের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা খসড়ায় নির্বাচনের জন্য সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ছাড়াও ১০টি সম্পাদকীয় পদ ও ৬টি সদস্য পদ রাখা হয়েছে।
সম্পাদকীয় পদগুলোর মধ্যে রয়েছে : ইতিহাস ও ঐতিহ্য, শিক্ষা ও গবেষণা, সাহিত্য-প্রকাশনা ও সাংস্কৃতিক ,অর্থ, ক্রীড়া, পরিবহন, সমাজসেবা, আন্তর্জাতিক বিষায়ক,সমাজ সেবা , কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া।
অন্যদিকে সম্পাদকীয় পদ গুলোর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদ থাকাটা কে যৌক্তিক মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। তবে পদটি না থাকাকে দেশের অস্তিত্বেকে দূরে সরিয়ে রাখার সামিল বলে মনে করছেন অনেকে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ২৪ এর জুলাই স্প্রিট কে ধারণ করা বর্তমান দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। শিক্ষার্থীদের দেশকে ভালোবাসা, দেশের জন্য আত্মত্যাগ ও দেশের স্বার্থ রক্ষায় সচেতন হতে শেখায় মহান মুক্তিযুদ্ধ। ফলে শিক্ষাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক পদ রেখে নির্বাচন করাটা অযৌক্তিক ও প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলা বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তবে অনেকেই এটাকে রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম এ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী সোহায়েব বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় পরিচয়ের মূল ভিত্তি। জকসুতে যদি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক না থাকে, তবে সেটা কেবল একটি পদ বাদ পড়া নয়, বরং জাতীয় মূল্যবোধকেই উপেক্ষা করা।”
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আহবায়ক মাসুদ রানা জানান, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পাদক নামটি আমাদের প্রদান করা নয়। তারা এ নাম নিজেদের মতো যুক্ত করেছে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশের জন্ম। সুতরাং বিভ্রান্ত করার সুযোগ নেই, আমরা এখনো চাই নব্বই এর জাগরণ ও চব্বিশের স্পিরিট বাঁচিয়ে রাখতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদটি সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করা হোক।
বাংলাদেশ গণতন্ত্র ছাত্র সংসদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখারা সদস্য সচিব শাহিন মিয়ে তার এক মন্তব্যে বলেন, আমরা মনে করি বাংলাদেশের জন্ম যেখানে সেই মুক্তির যুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক বাদ দিয়ে অন্য কোনো নামে তাকে উপস্থাপন করা এর পেছনে গভীর দূরবী সন্ধি রয়েছে কিনা সেটা দেখবার বিষয়, এটা যদি ইনটেনশনালী ভাবে করা হয় সেটা নিন্দা জানাই এবং দ্রুত সংশোধন করার দাবি জানাই।
বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম আরিফ অননুমোদিত খসড়া প্রকাশের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমরা সবার আগে চাই খসড়া বিধি আকারে আগে আসুক, তারপর পরিবর্তন, পরিমার্জন বা পরিবর্ধন করা যাবে। তবে এটার জন্য যেন জকসু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, আমাদের অস্তিত্বের স্বারক মুক্তিযুদ্ধ। সুতরাং এটাকে কোথাও অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক একটি স্বতন্ত্র পদ থাকবে না, এটা ভুল নয় অপরাধ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইতিহাস বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে ভুলে গেলে আমরা যে বাঙালি সেই পরিচয়ে আঘাত আসবে। সুতরাং ডাকসু, জাকসু, রাকসু, চাকসুর মতো জকসু তে ও স্বতন্ত্র মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদ দেওয়াটা সমীচীন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জকসু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা এখন বাস্তবায়নের পথে। তবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদ বাদ পড়ায় নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই পদটি সংযোজন হবে কি না, তা নির্ভর করবে কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ওপর।
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সাথে অবিচ্ছেদ্য। তাই ছাত্র সংসদে এ পদ না থাকা মানে জাতীয় চেতনার অবমূল্যায়ন। এখন সবাই অপেক্ষা করছে—চূড়ান্ত গেজেটে মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক পদ ফিরে আসবে কিনা।