Shopping cart

Magazines cover a wide array subjects, including but not limited to fashion, lifestyle, health, politics, business, Entertainment, sports, science,

গোয়াইনঘাটে বালু মাফিয়ার তান্ডব, পরিবেশকর্মীর পরীক্ষায় বাধা

জুলাই ১০, ২০২৫

গোয়াইনঘাটে বালু মাফিয়ার তান্ডব, পরিবেশকর্মীর পরীক্ষায় বাধা

গোয়াইনঘাটে বালু মাফিয়ার তান্ডব, পরিবেশকর্মীর পরীক্ষায় বাধা

সিলেটের গোয়াইনঘাটে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী এক তরুণ শিক্ষার্থী আজমল হোসেন তীব্র অভিযোগ তুলে ধরেছেন। মঙ্গলবার ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, অবৈধ বালু উত্তোলন চক্র ও তাদের সাথে জড়িত কিছু রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন তিনি ও তার সহযোগীরা। এর ফলে তার গুরুত্বপূর্ণ এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সম্ভব হয়নি।

নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন গোয়াইনঘাট উপজেলা শাখার আহ্বায়ক আজমল হোসেন বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার সাধারণ মানুষ ও ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আন্দোলন, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে আসছেন। কিন্তু এই আন্দোলনই এখন তার জন্য বিপদ ডেকে এনেছে। তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন যে কামরুল ইসলাম চৌধুরী, জেলা বিএনপি ক্রীড়া সম্পাদক স্টেলিন তারিয়াং, জিয়ারত খান, বহিষ্কৃত নেতা জাহিদ খান, সুহেল, আজির, সাত্তার, বুলবুল, বদরুল, লুনীর কামরুল, খায়রুল, সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ আব্দুল হালিম ও তাদের সহযোগীরা একটি সিন্ডিকেট গঠন করে দীর্ঘদিন ধরে ইজারা বহির্ভূতভাবে জাফলং, বাংলাবাজার, বাউরবাগ, বালুর হাওর ও নয়াগাঙ্গের পাড়ের মতো ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ECA) থেকে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে অবৈধ বালু উত্তোলন করছে। তাদের দৈনিক আয় আনুমানিক ৩ কোটি টাকা বলে তিনি দাবি করেন।

আজমল হোসেন আরও অভিযোগ করেন, তিনি বারবার জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ সুপার, ডিআইজি, বন কর্মকর্তাদের কাছে এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানালেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। গত ১৪ জুন পরিবেশ উপদেষ্টা জাফলং পরিদর্শনে এলে তার হাতেও একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। বর্তমান জেলা প্রশাসক লেঙ্গুড়া ও সারি-১ বালুমহাল ইজারা দিয়েছেন বলে উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, ইজারা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানও শর্ত লঙ্ঘন করে ECA এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।

তিনি গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও অফিসার ইনচার্জ (ওসি)-এর বিরুদ্ধে সরাসরি এই বালু চোরাচালানকারী চক্রের সাথে জড়িত থাকার এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলেন। তার দাবি, ইউএনও বাংলাবাজার বালুর হাওরে ৩ কোটি ঘনফুট বালু থাকা সত্ত্বেও মাত্র ২৫ লক্ষ ঘনফুট বালু জব্দ করে অবশিষ্ট বালু সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। পুলিশের নামে নৌকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। এজন্য তিনি এই দুই উর্ধ্বতন কর্মকর্তার তাৎক্ষণিক বরখাস্তের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে আজমল হোসেন গত ৪ জুলাইয়ের একটি সহিংস ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি জানান, প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে যেখানে অবৈধ বালু উত্তোলনকারী নৌকা আটক করা হয়েছিল, সেখানে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা অবৈধ বালুভর্তি নৌকা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে এলাকাবাসী বাধা দেন। এরপর প্রশাসন নাকি নীরব ভূমিকা পালন করে এবং পরে এলাকাবাসী, এমনকি শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের উপর লাঠিচার্জ চালানো হয়। একই দিনে লেঙ্গুড়া গ্রামে কামরুল ইসলাম চৌধুরী ও স্টেলিন তারিয়াংয়ের নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এ হামলায় স্থানীয় মাই টিভির সাংবাদিক হুমায়ুন আহমদকে দা, রামদা ও কোড়াল দিয়ে কোপানো হয়। তিনি বর্তমানে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আজমল আরও বলেন, প্রতিবাদকারী ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং প্রায় ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয়ে রেখে তাদের বিরুদ্ধে উল্টোভাবে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলা প্রত্যাহার এবং ইতিমধ্যে গ্রেপ্তারকৃতদের আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মুক্তি দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি, পরিবেশ উপদেষ্টার গাড়ি অবরোধের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার, সারি-১ ও লেঙ্গুড়া বালুমহালের ইজারা অবিলম্বে বাতিল এবং অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের জোর দাবি জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *